স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়া সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়েছে। সেখানকার কারা হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জানা গেছে, শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টায় তাকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। কারাগারের জেলার মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, বয়স জনিত রোগ ও বুকে ব্যথা অনুভব হওয়ায় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে সুনামগঞ্জ কারাগার থেকে সিলেটে আনা হয়েছে। তিনি সিলেট কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতালে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে। প্রয়োজনে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, এমএ মান্নান শনিবার সকাল থেকে অসুস্থতা বোধ করছিলেন। এ জন্য তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, এম এ মান্নান বয়স্ক মানুষ। শারীরিক নানা জটিলতা আছে। বহুদিন থেকে তিনি বুকে ও পেটে ব্যথার ওষুধ সেবন করছেন। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বুঝেছেন শারীরিক সমস্যার চেয়ে মানসিক সমস্যা বেশি। একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার। এছাড়া এখানে বক্ষব্যাধির কোনো বিশেষজ্ঞ নেই। তাই সিলেটে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, এম এ মান্নানকে হাসপাতালে আনার পর তাঁকে বিধ্বস্ত মনে হয়েছে। তিনি উল্টাপাল্টা কথা বলছিলেন। অনেক কিছু ভুলে যান। একপর্যায়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় এই সমস্যা আরও বেশি হয়েছে।
সুনামগঞ্জ কারাগারের কারাধ্যক্ষ (জেলার) হুমায়ুন কবীর বলেন, আমরা উনাকে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন সিলেটে নেওয়ার। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিলেটে পাঠানো হয়েছে। বেলা আড়াইটার দিকে তাঁকে সিলেট নেওয়া হয়।
যে ঘটনায় করা মামলায় এম এ মান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই ঘটনার সঙ্গে তিনি যুক্ত নন বলে জানান এম এ মান্নানের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘটনা ঘটেছে সুনামগঞ্জ পৌর শহরে। এম এ মান্নান বসবাস করেন শান্তিগঞ্জে। ঘটনার সময় তিনি সুনামগঞ্জ শহরে ছিলেন না। এছাড়া তিনি একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ। আমরা তাঁর বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় জামিনের আবেদন করেছিলাম। রোববার মামলার ধার্য তারিখ। আমরা আদালতে জামিনের প্রার্থনা করব।
এম এ মান্নানকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে শান্তিগঞ্জ উপজেলার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাঁকে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। তাঁকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও মুক্তির দাবিতে শান্তিগঞ্জে সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে তাঁর শাস্তির দাবিতে শান্তিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ শহরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা একাধিকবার বিক্ষোভ করেছেন।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরে গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী জহুর আহমদের ভাই জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা হাফিজ আহমদ বাদী হয়ে ২ সেপ্টেম্বর সদর মডেল থানায় দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় এম এ মান্নানসহ ৯৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি আছেন আরও ১৫০ থেকে ২০০ জন। তবে এখন পর্যন্ত এম এম মান্নান ছাড়া এই মামলার এজাহারনামীয় আর কোনো আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
সরকারের সাবেক আমলা ছিলেন এম এ মান্নান। ২০০৩ সালে অবসর নেওয়ার পর ২০০৫ সালে সুনামগঞ্জ-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে পরাজিত হন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার জয়লাভ করে সংসদে যান। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও পরে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৮ সালে একাদশ নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি টানা চতুর্থবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। যদিও এই মেয়াদে মন্ত্রিসভায় তাকে রাখা হয়নি। অবশ্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় স¤পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি করা হয়।