সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগের একটি দীর্ঘ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। দলটি বলেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলাসহ নানান অভিযোগে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের আগে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগকারীদের গ্রেফতার করুন। বৃহঃপতিবার (৩ অক্টোবর) ফেসবুকে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড পেজে এই পোস্ট দেওয়া হয়।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পোস্টে লেখা হয়, আওয়ামী লীগ কর্মীদের গ্রেফতারের আগে বিএনপির নামকরা সন্ত্রাসী, যারা থানা লুট করেছে, যারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে তাদের গ্রেফতার করুন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলা হয়, মনে রাখবেন, এই লুটেরা জঙ্গি গডফাদাররাই সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে নামবে। যা তারা করছে ঢাকা শহরের আশেপাশে ও পার্বত্য চট্টগ্রামে। আর গ্রেফতার হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে অবৈধ ইউনূস সরকার আওয়ামী লীগ নিধনেই বেশি ব্যস্ত।
দেশবাসীকে উদ্দেশ করে এতে বলা হয়, নির্যাতন করে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে দেবে মনে করলে বোকার স্বর্গে বাস করেন। আমাদের শিকড় অনেক গভীরে, এই দেশের জন্মের সঙ্গে আওয়ামী লীগের স¤পর্ক। দেশের ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ এর স্বমহিমায় ফিরে আসবে, দেশের অসমাপ্ত উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে একটি উন্নত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অপরাধী দলীয় নেতা কর্মীদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছিল দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, কেউ যদি অপরাধী হয়, দেশের আইন অনুযায়ী এর বিচার হোক। আমাদের সরকারও দলীয় অনেক অপরাধীকে বিচারের আওতায় এনেছিল। সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে সারা দেশে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আমরা তৈরি করেছিলাম।
পোস্টে বলা হয়, এই সরকার মিডিয়া অফিস দখলে ইতোমধ্যে বিশ্ব রেকর্ড করেছে। এই পর্যন্ত সারাদেশে দেড় শতাধিক সাংবাদিকের নামে হত্যা মামলা দিয়েছে। তিন শতাধিক সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি ড. ইউনুস বাংলাদেশের ইতিহাসে রিসেট বাটন দিয়ে দেশের ইতিহাস মুছে ফেলার কথা বলছেন। যা খুবই আপত্তিজনক এবং নিন্দনীয়। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাস মুছে ফেলার জন্য যতই রিসেট দেন না কেন, দেশের মৌলিক ও অস্তিত্বের ইতিহাসগুলো মুছার ক্ষমতা ওনার নাই। মুছতে পারলে তো বাংলাদেশই থাকবে না।
দেশবাসীর উদ্দেশে বলা হয়, দেশের সার্বিক অবস্থা চারদিকে সবার মাঝে এক সংকটময় অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যে কোনও পরিস্থিতিতে আপনাদের পাশে আছেন এবং থাকবেন ইনশাল্লাহ।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে ভারত যাওয়ার কারণ উল্লেখ করে পোস্টে বলা হয়, এখন হয়তো সবকিছু অনুধাবন করতে পারছেন কী পরিস্থিতিতে তিনি দেশ ছেড়েছিলেন। ষড়যন্ত্রকারীরা আরও লাশ চেয়েছিল। তিনি চাননি আর কোনও বাবা-মায়ের বুক খালি হোক। তাই সময়ের প্রয়োজনে এই সাময়িক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জাতীয় সংসদ ভবন, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, থানায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটের কথা তুলে ধরে বিবৃতি বলা হয়, তখন সরকার আরও কঠোর হলে হয়তো আরও লাশ পড়তো, আরও অনেক বাবা-মায়ের বুক খালি হতো। তাই মানুষের জানমাল রক্ষায় শেখ হাসিনা এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
আন্দোলন দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ ছিল- প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্য উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এ থেকে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে এটা ছাত্রদের কোটার আন্দোলন ছিল না। তাই সব দাবি মেনে নেওয়ার পরও তারা পরিকল্পিতভাবে সারাদেশে অরাজকতা চালিয়েছে। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি দেখে আপনারাও নিশ্চয় এখন অনুধাবন করতে পারছেন।
সাম্প্রতিক সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করে পোস্টে বলা হয়, সবই করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। দেশে একটা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে, স্থিতিশীলতা রক্ষার নামে বাইরের কোনও দেশকে বাংলাদেশে ঘাঁটি তৈরির সুযোগ করে দেওয়া।