সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
পাট থেকে পরিবেশবান্ধব সোনালী ব্যাগ উৎপাদনের টেকসই পদ্ধতি বিস্তৃতির জন্য পৃথক কারখানা স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। পাটের বহুমুখী ব্যবহারের ক্ষেত্র প্রসারে এই কারখানায় পাট থেকে পরিবেশবান্ধব পচনশীল যৌগিক পলিমার তৈরি করে সোনালী ব্যাগসহ বিভিন্ন মোড়ক সামগ্রী তৈরি করা হবে। পরিবেশবান্ধব পচনশীল মোড়ক সামগ্রী উৎপাদন ও রপ্তানির মাধ্যমে অর্জন করা হবে বৈদেশিক মুদ্রা। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে বাণিজ্যিকভাবে চালু হবে পাটের ব্যাগ তৈরির কাজ। এক কেজিতে গড়ে ১০০ ব্যাগ করা যায়। প্রাথমিকভাবে দৈনিক ৫ টন সোনালী ব্যাগ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
আণবিক শক্তি কমিশনের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোবারক আহমদ খান ২০১৬ সালে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট থেকে সেলুলোজ প্রক্রিয়াজাত করে পরিবেশবান্ধব সোনালি ব্যাগ আবিষ্কার করেন। পরে তাকে বিজেএমসির বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
ড. মোবারক আহমদ খান গত ২৮ আগস্ট সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সোনালী ব্যাগের নমুনা হস্তান্তর করেন।
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পাট দিয়ে তৈরি সোনালী ব্যাগ দেশের পাটের স্বর্ণযুগ ফিরিয়ে আনতে অবদান রাখবে। তিনি বলেন, সোনালী ব্যাগ পরিবেশবান্ধব। এ ব্যাগের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সোনালী ব্যাগ অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিশ্বের প্যাকেজিংয়ের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে। এ ব্যাগ বহুল ব্যবহারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে, বিজেএমসির মুখ্য পরিচালন কর্মকর্তা মো. নাসিমুল ইসলাম বলেন, ২০২৫ সাল থেকেই আমরা বাণিজ্যিকভাবে সোনালী ব্যাগ তৈরি করতে পারবো। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের পাইলট প্রকল্পও শেষ হয়েছে। ১০০ কোটি টাকার একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এর আওতায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হবে সোনালী ব্যাগ তৈরির কাজ।
প্রসঙ্গত, সোনালী ব্যাগ দেখতে প্রচলিত পলিথিনের মতোই। এটি হালকা-পাতলা ও টেকসই। পাটের সূক্ষ্ম সেলুলোজ প্রক্রিয়াজাত করে এ ব্যাগ তৈরি করা হয়। পাটের তৈরি সোনালী ব্যাগ মাটিতে ফেললে তা মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। ফলে পরিবেশ দূষিত হবে না। একটি ব্যাগ একাধিকবার ব্যবহার করা যায়।
বিজেএমসি জানায়, পলিথিনের বিকল্প পচনশীল সোনালী ব্যাগ তৈরির পাইলট প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয় ২০১৭ সালের ১২ মে। রাজধানীর ডেমরায় লতিফ বাওয়ানী জুট মিলস লিমিটেডে ব্যাগ তৈরির প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়। বিভিন্ন পর্যায় পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত মেশিনের সাহায্যে পাটের সেলুলোজ থেকে শিট তৈরি করা হয়। এরপর হাতে সেলাই করে শিট জোড়া দিয়ে ব্যাগ উৎপাদন করা হয়। সীমিত পরিসরে উৎপাদিত সেই ব্যাগ বিক্রিও করছে বিজেএমসি। এই লতিফ বাওয়ানী জুট মিলসেই বাণিজ্যিকভাবে সোনালী ব্যাগ তৈরি হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত এবং সফল পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হলে, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একইভাবে কারখানা স্থাপনে আগ্রহী ও উদ্বুদ্ধ হবেন। প্রকল্পটি লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব হবে বিধায় ছোট ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন এবং প্রচুর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।