গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর উত্তেজিত ছাত্র-জনতার আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার শত শত ঘটনা ঘটেছে। এইসব ঘটনাকে ‘মব জাস্টিস’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা, অন্যান্য উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান বারবার ‘মব জাস্টিস’ বন্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও কার্যত কোথাও তা বন্ধ হয়নি। কেউ কথা শোনেনি।
ইংরেজি শব্দ ‘মব’ এর বাংলা অর্থ হলো দুষ্কৃতি বা হামলার উদ্দেশ্যে সমবেত উচ্ছৃঙ্খল জনতা, উত্তেজিত জনতা, গুন্ডাদল। অন্যদিকে ‘জাস্টিস’ শব্দের অর্থ হলো- ন্যায়সঙ্গত আচরণ বা ব্যবহার; ন্যায়পরায়ণতা; ন্যায়বিচার; অথবা আইন-ব্যবস্থায় যার মাধ্যমে মানুষের বিচার করা হয় এবং শাস্তি দেয়া হয়; উচ্চ আদালতের বিচারক। সংগত কারণেই ‘মব’ এর সাথে ‘জাস্টিস’ যায় না। মব কোন কারণেই জাস্টিস হতে বা করতে পারে না। সমবেত উচ্ছৃঙ্খল জনতার দ্বারা বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- কিংবা অন্য কোন অপরাধকে ‘মব জাস্টিস’ বলায় মবরা আরও উৎসাহী হয়ে ওঠেছে। তারা ভাবছে, ‘আমরা যা করছি তা ন্যায়বিচার হচ্ছে’। এটাকে কেউ অবৈধ ভাবছে না। ফলে দিনে দিনে ‘মব জাস্টিস’ এর নামে সংঘবদ্ধ অপরাধ বেড়েই চলেছে। এটিকে বলা যেতে পারত ‘মব জাজমেন্ট’, ‘সংঘবদ্ধ উত্তেজিত জনতার বিচার’, যাকে বৈধ ভাবার কোন সুযোগ থাকে না।
উত্তেজিত ছাত্র-জনতার দ্বারা দেশব্যাপী ঘটে যাওয়া হাজারো অপরাধের কোন মামলা না হওয়া; এসব ঘটনাও বিচারের আওতায় না আসায় ‘মব’দের দৌরাত্ম্য কমছে না। ৫ আগস্টের পরে সবচেয়ে বেশি ‘মব জাজমেন্ট’ এর ঘটনা ঘটেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। দেশের প্রায় সব জায়গায় ভিসি, অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও অনেক সাধারণ শিক্ষক ‘মব জাজমেন্ট’ এর শিকার হয়েছেন। ছাত্র-ছাত্রীরা অপমান অপদস্থ করে, হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অনেক শিক্ষকের নিকট থেকে জোরপূর্বক অব্যাহতিপত্র আদায় করে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়। জোরপূর্বক আদায় করা এইসব অব্যাহতিপত্রের ভবিষ্যৎ কী, যারা অনিচ্ছায় অব্যাহতি দিয়েছে তাদের চাকরি থাকবে কি না এইসব বিষয়ে সরকার থেকে কোন কিছুই বলা হয়নি। ফলে মবরা ধরেই নিয়েছে, কোনক্রমে কাউকে অব্যাহতিপত্র রেখে অফিস থেকে বের করে দিতে পারলেই হল। ফলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই অপরাধ ঘটেছে।
দেশে অন্তর্বর্তী সরকার আছে, বিচারবিভাগ কাজ করছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে, তাছাড়া ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে দেশব্যাপী সেনাবাহিনী মোতায়েন আছে। তারপরও কেনো ‘মব জাজমেন্ট’ চলবে? এই প্রশ্ন এখন সবার।
‘মব জাজমেন্ট’ এর খারাপ দিক অনেক সুদূরপ্রসারী হতে পারে। তাছাড়া আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার এই প্রবণতা দ্রুত বন্ধ না করলে অনেকে এই সুযোগকে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকেন্দ্রীক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে কাজে লাগাবে। দেশে নৈরাজ্য বাড়বে এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সুফল থেকে দেশ বঞ্চিত হবে। তাই সরকারকে ‘মব জাস্টিস’ বন্ধ করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।