চয়ন কান্তি দাস ::
ধর্মপাশা উপজেলার বাদশাগঞ্জ পাবলিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবনির্মাণাধীন পাঁচতলা একাডেমিক ভবনের সিঁড়ির চিলেকোঠায় রাতের আঁধারে টর্চের লাইটের আলোতে ছাদ ঢালাই করা ও ভবনের প্লাস্টারের কাজে নি¤œমানের বালু ব্যবহার করার অভিযোগে ওই ভবনটির যাবতীয় কাজ গত আটদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধর্মপাশা উপজেলার কয়েকজন শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে ভবনের কাজে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়টি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীকে মুঠোফোনে অবগত করা হলে ওই কর্মকর্তার নির্দেশে নবনির্মাণাধীন ভবনের যাবতীয় কাজ ঠিকাদার বন্ধ করে দিয়েছেন।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধর্মপাশা উপজেলার বাদশাগঞ্জ পাবলিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টির পাঁচতলা বিশিষ্ট নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য কাজের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রের মাধ্যমে চার কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজটি পায় এলসিএমই নামের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রায় দেড় বছর আগে ভবন নির্মাণকাজটি শুরু করা হয়। আগামী বছরের ২৫ জানুয়ারির মধ্যে ভবন নির্মাণকাজটি শেষ করার কথা রয়েছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে আটটার দিকে অন্ধকারে টর্চের আলোতে বায়ুব্রেটার মেশিন ছাড়াই ঠিকাদারের নিয়োজিত ৪/৫জন শ্রমিক নবনির্মাণাধীন ভবনটির সিঁড়ির চিলেকোঠায় ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শুরু করেন। খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম, আজহারুল ইসলাম দীপ্ত, রিফাত হাসান জনি, মোল্লা মাহমুদ হাসান, নিবিড় হাসান বাঁধন ও একেএম আয়মান ওইদিন রাত সাড়ে নয়টার দিকে সেখানে গিয়ে এই দৃশ্য দেখতে পান। অন্ধকারের মধ্যে বায়ুব্রেটার মেশিন ছাড়া কাজ করতে মানা করে তারা সেখান থেকে চলে আসেন। শিক্ষার্থীরা চলে আসার পর ঠিকাদারের নিয়োজিত শ্রমিকেরা টর্চের আলোতেই সিঁড়ির চিলেকোঠার ছাদ ঢালাইয়ের কাজটি সম্পন্ন করেন।
১৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে নি¤œ মানের বালু ব্যবহার করে শ্রমিকেরা ভবনের প্লাস্টারের কাজ শুরু করেন। খবর পেয়ে ওইদিন সকাল ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে নি¤œমানের বালু দিয়ে ভবনের প্লাস্টার কাজ না করার জন্য নিষেধ করেন। তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষার্থীরা এই অনিয়মের বিষয়টি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীকে মুঠোফোনে অবগত করেন। পরে নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে ভবনটির যাবতীয় কাজ তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ রাখা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধর্মপাশা উপজেলার শিক্ষার্থী আজহারুল ইসলাম দীপ্ত বলেন, বাদশাগঞ্জ পাবলিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণাধীন কাজের বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আটদিন ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কেউ এখনো ঘটনাটির তদন্তে আসেননি।
ভবনটির তদারকির দায়িত্বে থাকা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদুর রহমান নাঈম বলেন, ওই বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকলেও গত ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর আমি ধর্মপাশার বাহিরে ছিলাম। পরে এসে আমি তা জানতে পেরেছি।
বাদশাগঞ্জ পাবলিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্লাস্টারের কাজ যে বালু ব্যবহার করা হচ্ছিল তা খুবই নি¤œমানের। এছাড়া রাতের আঁধারে টর্চের আলোতে সিঁড়ির চিলেকোঠার ছাদ ঢালাই দেওয়ার খবরটি আমি শুনেছি। বিষয়টি অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলেছি।
এলসিএমই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার মঞ্জু বলেন, ভবন নির্মাণকাজে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে আমরা নতুন করে তা করে দেব।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধর্মপাশা উপজেলার কয়েকজন শিক্ষার্থী ভবন নির্মাণকাজের অনিয়মের বিষয়টি মৌখিকভাবে অভিযোগ করায় আমি সঙ্গে সঙ্গে কাজটি বন্ধ রেখেছি। সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খুব শিগগিরই জেলা কার্যালয়ের এক সহকারী প্রকৌশলীকে ধর্মপাশায় পাঠাব। কাজে কোনোরকম অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।