আশিস রহমান ::
দোয়ারাবাজার উপজেলার হাওপাড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন- একটি সেতু। উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের খাসিয়ামারা নদীর আলীপুর-টেংরাটিলা অংশে সেতু না থাকায় এখানকার বাসিন্দাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এই একটিমাত্র সেতুর অভাবে সুরমা ইউনিয়নের কানলার হাওর অধ্যুষিত আলীপুর, নূরপুর, সোনাপুর, নন্দীগ্রাম, বৈঠাঠাই, হাছনবাহার, পশ্চিম টিলাগাঁও ও লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বড়কাটা, সুলতানপুর, রসরাই, তিলোরাকান্দিসহ আশপাশের অন্তত ১৫টি গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে উপজেলা সদর ও জেলা সদরে এদিকে যাতায়াত করতে হয় রশি টেনে নৌকা পারাপারের মাধ্যমে। এসব এলাকার মানুষ প্রায় ৫ দশক ধরে বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য খামার, সবজি চাষ ও বোরো ধান আবাদ করে আসছেন। নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে চাষী ও মৎস্য খামারিদের বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে। হাওরের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে হিমশিম খেতে হয় চাষীদের। দীর্ঘদিন ধরে এখানকার বাসিন্দারা খাসিয়ামারা নদীর আলীপুর-টেংরাটিলা অংশে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। অবশেষে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর হাওরপাড়ের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের আন্তরিক প্রচেষ্টায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে এখানে নির্মিত হতে যাচ্ছে সেতু। গত ২ ফেব্রুয়ারি এমপি মানিক সরেজমিনে এসে খাসিয়ামারা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গেছেন। এরপর থেকে হাওরপাড়ের ঘরে ঘরে বইছে আনন্দের বন্যা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, খাসিয়ামারা সেতু নির্মিত হলে হাওরপাড়ের বেহাল অর্থনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। কানলার হাওরপাড়ে উৎপাদিত মৌসুমি সবজি ও বাণিজ্যিক মৎস্য খামারের মাছ জেলা ও বিভাগীয় শহরে সরাসরি বাজারজাত করা যাবে। এতে মাছ চাষী ও কৃষকরা লাভবান হবেন।
এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, দোয়ারাবাজার থেকে টেংরাটিলা হয়ে আলীপুর সড়কে খাসিয়ামারা নদীতে নির্মিতব্য ৫০০ মিটার চেইনেজে ৭৫ মিটার পিসি গার্ডার ব্রিজের বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪ কোটি ২৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।
আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক মুহম্মদ মশিউর রহমান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা শৈশবে খাসিয়ামারা নদী সাঁতরে স্কুলে গিয়েছি। এখন পর্যন্ত রশি টানা খেয়া নৌকা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। নতুন প্রজন্ম আগামীতে এদিকে সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে। আমাদের কাছে এটা এখনো স্বপ্ন মনে হয়।
নূরপুর গ্রামের বাসিন্দা ও সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ বলেন, এ সেতুর মাধ্যমে উপজেলা সদর, জেলা ও বিভাগীয় শহরে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের দ্বার উন্মোচিত হবে।
সুনামগঞ্জ -৫ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাওড়পাড়ের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। হাওড়পাড়ের মানুষ সবসময়ই জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ভালোবেসে উন্নয়নের পক্ষে নৌকায় ভোট দিয়ে আসছে। আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল খাসিয়ামারা নদীতে সেতু নির্মাণ। আমি প্রতিশ্রুতি রেখেছি। ইতোমধ্যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে এসেছি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে আলাপ হয়েছে অচিরেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। আগামীতে রশি টেনে খেয়া পারাপার হতে হবেনা, এদিক দিয়ে সরাসরি গাড়ি চলাচল করবে।