স্টাফ রিপোর্টার ::
২০২২ সালের একুশে পদক পাচ্ছেন সুনামগঞ্জের সন্তান ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ। ভাষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে এই পদক দিচ্ছে সরকার। বৃহস্পতিবার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একুশে পদকের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করা হয়। ঝর্ণা দাশসহ মোট ২৪ জন পাচ্ছেন একুশে পদক। একুশে পদক পাওয়া বিশিষ্টজনেরা হলেন- ভাষা আন্দোলনে মোস্তফা এম. এ. মতিন (মরণোত্তর) ও মির্জা তোফাজ্জল হোসেন মুকুল (মরণোত্তর), শিল্পকলায় (নৃত্য) জিনাত বরকতউল্লাহ, শিল্পকলায় (সঙ্গীত) নজরুল ইসলাম বাবু (মরণোত্তর), ইকবাল আহমেদ ও মাহমুদুর রহমান বেণু, অভিনয়ে খালেদ মাহমুদ খান (মরণোত্তর), আফজাল হোসেন ও মাসুম আজিজ, মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী (মরণোত্তর), কিউ. এ. বি. এম রহমান, আমজাদ আলী খন্দকার, সাংবাদিকতায় এম এ মালেক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মো. আনোয়ার হোসেন, শিক্ষায় অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ, সমাজসেবায় এস. এম. আব্রাহাম লিংকন ও সংঘরাজ জ্ঞানশ্রী মহাথের, ভাষা ও সাহিত্যে কবি কামাল চৌধুরী ও ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ, গবেষণায় ড. মো. আবদুস সাত্তার মণ্ডল, ড. মো. এনামুল হক (দলগত), (দলনেতা), ড. সাহানাজ সুলতানা (দলগত), ড. জান্নাতুল ফেরদৌস (দলগত)।
এর আগে ২০১৭ সালে ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিলেন। ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ ১৯৪৫ সালে ২৭ জুলাই ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা সুধাংশু শেখর রায় চৌধুরী ও মা নীলিমা চৌধুরী। সুখাইড়ে জমিদার পরিবারের প্রতিষ্ঠিত স্কুলেই তার বাল্য শিক্ষা, হাতেখড়ি হয়। বাল্যকালেই তিনি চমকে দিলেন অসাধারণ মেধার পরিচয় দিয়ে। দুই দুইবার পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে ডবল প্রমোশন পান। ফলে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে এবং তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। পরে সুনামগঞ্জের সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। সেখান থেকেই তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সুনামগঞ্জ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন (মানবিক বিভাগে)। বিএ-তে ভর্তিও হয়েছিলেন সুনামগঞ্জ কলেজে। কিন্তু বিয়ের পর সংসারের দায় দায়িত্ব মাথায় নিয়ে পড়াশোনায় অনিয়মিত হয়ে যেতে হয় তাঁকে। পরবর্তীতে স্বামীর কর্মস্থল রাজশাহীতে অবস্থানকালে রাজশাহী কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম হন ১৯৭৬ সালে।
ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ-এর স্বামী শৈলেন্দু শেখর দাশ পুরকায়স্থ। শৈলেন্দু শেখর কৃষি ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক পদ থেকে অবসর নেয়ার পর আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তাদের দুই কন্যা, অজন্তা সিথী (এডভোকেট), ইলোরা কেকা (ব্যাংক কর্মকর্তা)। তাদের দুই পুত্র জয়সূর্য জন, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বিষয়ে শিক্ষা শেষ করে বিদেশে কর্মরত এবং শুভ সূর্য জর্জ বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার বুয়েট, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ইংল্যান্ড। বর্তমানে তিনিও বিদেশে কর্মরত।
দৈনিক সংবাদের খেলাঘর পাতায় ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা প্রথম গল্প “বাদল দিনে”। সেই দশ বছর বয়সেই তিনি জায়গা করে নেন দৈনিক আজাদের বাগবান ভাইর পাতা মুকুলের মহফিলে, দৈনিক ইত্তেফাক কচিকাঁচার আসরে, দৈনিক পাকিস্তানের সাত ভাই চ¤পায়, দৈনিক সংবাদের খেলাঘরে। সিলেটের কিছু আঞ্চলিক পত্রিকায় তাঁর লেখা বের হত সেই ছোট বয়সে। বৈচিত্র্যময় সত্তার অধিকারী ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ। নিরলস সাধনা নিয়ে তিনি পৌঁছে গেছেন সাফল্য আর শ্রেষ্ঠত্বের শিখরে। কবিতা দিয়ে তাঁর লেখালেখি শুরু হলেও তিনি গল্পকার, উপন্যাসিক, শিশু সাহিত্যিক ও সঙ্গীত রচয়িতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ এবং ফিচারও লিখেছেন তিনি।
বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের অনুমোদিত গীতিকার ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ। শৈশবে মায়ের হাতেই তাঁর গানের হাতেখড়ি।
মুকুলের মহফিল, ঘেলাঘর কচিকাঁচার আসরে লিখতে লিখতে বড়দের গল্প নিয়ে এলেন ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ। তাঁর লেখা প্রথম বড়দের গল্প ‘রক্ত গোলাপ’ ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। একে একে প্রায় সব কয়টি জাতীয় দৈনিকে তিনি গল্প লিখতে শুরু করেন এবং সে ধারা এখনও অব্যাহত রেখেছেন। আকর্ষণীয় গল্প নিয়েই ১৯৬৬ইং সনে প্রকাশিত হয় ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থের প্রথম গল্পগ্রন্থ গোধূলির রং।