সমাজ নিকৃষ্ট ও উৎকৃষ্ট মানুষের সমষ্টি। যে-কোনও দেশের যে-কোনও সমাজের বেলায় এই সত্যটি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। আত্মকেন্দ্রিকতায় আবিষ্ট নিকৃষ্ট মানুষেরা সাধারণত ভালোবাসে কেবল নিজেকে, সমাজের কাছ থেকে নেবার বেলায় এরা ষোলআনা উন্মুখ থাকে কিন্তু সমাজকে দেবার বেলায় এদের কার্পণ্যতার কোনও শেষ নেই। আত্মস্বার্থ উদ্ধারের প্রয়োজেনে এরা দেশের স্বার্থকে বিকিয়ে দিতে পারে অনায়াসে, এমন কি ঔপনিবেশিক শক্তির কাছে দেশকে তোলে দিয়ে রাজাকার হতেও কসুর করে না। এদের বিপরীতে যাঁরা নিজের চেয়ে অপরের স্বার্থোদ্ধারের চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন, তাঁদেরকেই লোকে বলে দেশঅন্তপ্রাণ মানুষ কিংবা দেশপ্রেমিক। এইসব দেশপ্রেমিক মানুষের মধ্যে যাঁরা শ্রেষ্ঠ, তাঁরা সমাজ পরিসরের শ্রেণিদ্বান্দ্বিকতার সংগ্রামমুখর পরিসরে নিপীড়িত মানুষের পক্ষে লড়াই করতে করতে কেউ ভøাদিমির ইলিচ লেনিন, কেউবা মাও সেতুঙ, কেউ হয় তো বা ফিদেল ক্যাস্ট্রো হয়ে উঠেন। এমন বড় মাপের দেশপ্রেমিক মানুষের আবির্ভাব সব সময় ঘটে না কোনও জাতির জীবনে, জাতি ও সমাজকে হাজার বছর অপেক্ষায় কাটাতে হয় তাঁদের আবির্ভাবের জন্যে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে হাজার বছররের ব্যবধানে এমন একজনের আবির্ভাব ঘটেছিল, তাঁর নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর আবির্ভাবের সমাজ পরিসর ও সাংস্কৃতিক আবহ তৈরির জন্যে এই বাংলায় যেমন আবির্ভূত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও সুকান্তরা তেমনি আবির্ভূত হয়েছিলেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, সূর্য সেন, রবিদাম, হুসেন বখত, বরুণ রায়ের মতো হাজারো মহৎ মানুষেরা। অর্থাৎ তিনি একা ছিলেন না, তিনি এসেছিলেন পরিষদ পরিবেষ্টিত হয়ে। আর আমরা বাঙালিরা হাজার বছরের স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়ে স্বাধীনতার স্বাদ লাভে সৌভাগ্যবান হয়ে ছিলাম ১৯৭১-য়ে। করোনা বিপর্যয়ের ক্রান্তিকালে সীমিত পরিসরে এই পরাৎপর পুরুষোত্তমের জন্মদিন পালিত হয়ে গেলো গত ১৭ মার্চ। সমগ্র জাতির সঙ্গে আমরা তাঁর স্মৃতিতর্পণ করছি, শ্রদ্ধাবনত হয়ে জানাচ্ছি কৃতজ্ঞতা এবং ঘোষণা করছি তিনিই জাতির অবিকল্প মুক্তির পথ। তিনি তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বলে গেছেন, ‘এই পুঁজিপতি সৃষ্টির অর্থনীতি যতদিন দুনিয়ায় থাকবে ততদিন দুনিয়ার মানুষের উপর থেকে শোষণ বন্ধ হতে পারে না।’ আমরা যেনো তাঁর সেই সত্যোচ্চারণ ভুলে না যাই।