গত শুক্রবার (১২ মার্চ ২০২১) দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদপ্রতিবেদনে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ ও বিরোধীদলীয় হুইপ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহর বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে, তিনি আলফাত চত্বরে অনুষ্ঠিত এক গণসমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘ঢাকা-সিলেট ৬ লেন সড়কের সঙ্গে এবার সুনামগঞ্জ যুক্ত না হলে আর কোনো দিন যুক্ত হবে না।’ সুনামগঞ্জের উন্নয়নকর্মই তাঁর সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র। সুনামগঞ্জবাসী তা জানেন এবং সে-জন্য তিনি সুনামগঞ্জের সাধারণ্যে পরম প্রিয় এক মানুষ। সর্বদা তিনি সুনামগঞ্জের মঙ্গলভাবনায় ভাবিত, তাঁকে আমরা অভিনন্দন জানাই।
এদিকে সুনামগঞ্জের বিদগ্ধ মহল, সুনামগঞ্জের জন্য ৬ লেনের প্রয়োজনীয়তাকে নাকচ করে না দিলেও, ৬ লেনের সঙ্গে এই মুহূর্তে আগ বাড়িয়ে যুক্ত হওয়ার আন্দোলন গড়ে তোলার কোনও যৌক্তিকতা নিহিত আছে বলে মনে করেন না। তাঁদের ধারণা, এমন দাবি নিয়ে অর্থহীন কোনও আন্দোলনেরও দরকার নেই। তাঁদের বক্তব্যের মর্মার্থ এই যে, সুনামগঞ্জ ৬ লেনের কাছে যাবে না, ৬ লেন সুনামগঞ্জের কাছে আসবে। অর্থাৎ মানুষ পর্বতের কাছে যায়, পর্বত মানুষের কাছে যায় না। কথা হলো সুনামগঞ্জ কথিত লেনের কাছে যাবে না, প্রয়োজনে লেন সুনামগঞ্জের কাছে আসবে। তাঁদের দাবি, ‘সুনামগঞ্জ জেলার উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা’ আগে বাস্তবায়িত হোক। আমরা মনে করি তাই উত্তম। মহপরিকল্পনানুসারে সুনামগঞ্জের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হলে সুনামগঞ্জকে ৬ লেনের পেছনে দৌড়াতে হবে না, বরং ৬ লেন সুনামগঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠবে এবং যুক্ত হতে বাধ্য হবে। বর্তমানে ৬ লেন সুনামগঞ্জের উন্নয়ন কিংবা স্বার্থোদ্ধারে তেমন কোনও গুরুত্ববহ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে না, প্রকৃতপ্রস্তাবে যতোটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কার্যক্রম। আগে লেন নয়, আগে চাই উন্নয়ন। আন্দোলনে নামার আগে সুনামগঞ্জকে তাই গভীরভাবে ভাবতে হবে, নির্ধারণ করতে হবে আন্দোলনের মূল কর্মসূচি।
শনিবার (১৩ মার্চ ২০২১) দৈনিক সুনামকণ্ঠে ‘সুনামগঞ্জ জেলার উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার’ রূপকল্প নিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক সালেহিন চৌধুরী শুভর গভীর পর্যালোচনামূলক বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। এই বক্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে কোনও না কোনও বক্তব্য যে-কারও পক্ষ থেকে থাকতেই পারে, এই মুহূর্তে সে-বিতর্কে মনোনিবেশ আমাদের কর্তব্য নয়। আমরা সাধারণভাবে মনে করি, তাঁর বক্তব্যের লক্ষ্যাভিমুখি হওয়াই আপতত সুনামগঞ্জের জন্য উত্তম। তিনি (সালেহিন চৌধুরী শুভ) সুনামগঞ্জের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে অনেক কথা বলেছেন, যার ব্যাপক ব্যাখ্যাবিশ্লেষণের স্থান স্বল্প পরিসর সম্পাদকীয় নয়। তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে কেবল বলি, হাওর উন্নয়ন কিংবা হাওরব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করতে হবে আগে, তবেই ৬ লেন সুনামগঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হওয়াটা একটা অনিবার্য আর্থনীতিক কর্মসূচি হয়ে উঠবে, দেশের স্বার্থে দেশের জন্যে, সুনামগঞ্জকে ৬ কিংবা ৮ লেনে যুক্ত হওয়ার জন্যে তীর্থের কাক হয়ে বসে থাকতে হবে না। মনে রাখতে হবে, ‘হাওরব্যবস্থাপনাকে’ উপেক্ষা করে, অর্থাৎ সুনামগঞ্জের নদী খনন, জমিকে দু’ফসলি করা, বিলগুলোর গভীরতা বাড়ানো, হাওরকান্দায় পরিকল্পিত বনায়ন, হাওরাঞ্চলের বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলোর পরিকল্পিত উন্নয়ন অর্থাৎ এককথায় ধানসহ মাছ ও জলজ-বনজ বনের প্রতিবেশকে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নয়ন করাকে উপেক্ষা করে, যাকে বলে, হাওর জনগণের উৎপাদন ব্যবস্থায় বিপ্লব সাধন না করে সুনামগঞ্জের যে-উন্নয়নের পরিকল্পনাই কার হোক না কেন প্রকৃতপ্রস্তাবে তা হবে সুনামগঞ্জের উন্নয়নের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা, সুনামগঞ্জের উন্নয়নকে ঠেকিয়ে দেওয়া বা পিছিয়ে দেওয়ার ভয়াবহ ষড়যন্ত্র।