1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০১:৪৪ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সম্পদ লুটের প্রতিকার হবে কবে?

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১

সংবাদটির শিরোনাম করা হয়েছে, ‘খাস জমি ব্যক্তির নামে রেকর্ড করে চাকরি হারালেন ভূমি কর্মকর্তা’। পত্রিকায় সংবাদটি পড়ে মনে হলো এর মধ্যে একটি অভিনবত্ব আছে। বাংলাদেশে কোনও সরকারি কর্মকর্তার বিচার হয়েছে এবং বিচারে শাস্তি হয়েছে এমন ঘটনা বিরল তো বটেই, লোকে এমন হওয়াটাকে অসম্ভব বলেই জানে। এর অর্থাৎ এই শাস্তি প্রদানের অবশ্য একটি বাস্তব কারণ আছে।
ব্রিটিশ আমল থেকে এ দেশের আমলা-মুৎসুদ্দিরা এক রকম আইনের ঊর্ধ্বে অবস্থানকারী একটি শ্রেণিগোষ্ঠী হিসেবেই লোকসমাজে বিবেচিত হয়ে আসছেন এবং ইতোমধ্যে নিজেদেরকে জনগণের প্রভুত্বের মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। তারা প্রভুত্বের এই অহমিকাকে তাদের প্রাতিস্বিক আচরণে কালেভদ্রে দৃষ্টান্তস্বরূপ বিশ্বকর্মার বিশ্বরূপ প্রদর্শনের মতো করে প্রকাশ করে থাকেন, তাঁর বিস্ময়কর ঘটনা মাঝেমধ্যেই গণমাধ্যমের সংবাদের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হতে দেখা যায়। তাঁর উদাহরণ উপস্থিত করা এখানে আপাতত আবশ্যক নয়। তবে অনায়াসে প্রমাণ করা যায় যে, তারা এখন পর্যন্ত এমন কোনও আচরণ প্রকাশ করতে সমর্থ হন নি যে, যাতে মনে হতে পারে তারা দেশের মানুষের সেবক। বরং এর বিপরীতে নিজেদের প্রণোদিত আইনের দ্বারা তারা তাদের নিজেদেরকে এমনই এক সুরক্ষাবলয়ের বাসিন্দা করে তুলেছেন যে, তারা শত অপরাধ করলেও সাধারণ মানুষ কারও কাছে বিচার প্রার্থী হওয়ার কোনও পথ খোলা রাখেন নি। কারণ বিচার করার করণকৌশলটিও তাদের দ্বারাই শুরু এবং শেষ হয়। তাই তারা একজন আর একজন বিপদগ্রস্তের সহায়ক হয়ে উঠতে পারেন সহজেই এবং এই সহায়তা প্রদানের মধ্যে প্রকারান্তরে নিজেদের শ্রেণিস্বার্থকেই তারা রক্ষা করে থাকেন। কিন্তু ‘খাস জমি ব্যক্তির নামে রেকর্ড করা’ এমন একটি ঘটনা, এটিকে ছাড় দেওয়ার কোনও উপায় নেই, কারণ এই অপকর্মটি সরকারি কিংবা রাষ্ট্রীয় সম্পদকে ব্যক্তি মালিকানায় পর্যবশিত করার প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে। আপাত দৃষ্টিতে ‘অভিনবত্ব’র
রূপ ধরে আবির্ভূত হওয়া বাস্তব কারণটি এখানে এই ভাবেই একজন অপরিণামদর্শী আমলাকে তার অপকর্মের জন্য শাস্তি প্রদান করে নিজেকে প্রদর্শিত করেছে।
কিন্তু কথা হলো আমাদের দেশের সরকারি চাকুরে যখন তার প্রাপ্ত বেতনের লক্ষকোটিগুণ সম্পদের মালিক বনে যান এবং বাস্তবে প্রমাণ করেন যে, তিনি চাকুরিক্ষেত্রে বহাল থাকাবস্থায় অবাধে দুর্নীতি করেছেন, তার কোনও প্রতিকার বা বিচার হচ্ছে না, বরং বিপরীতে তিনি আইনের ঊর্ধ্বেই থেকে যাচ্ছেন, সমাজ স্বীকৃত এই সমাজবাস্তবতাটিকে অপরাধ হিসেবে কেন বিবেচনা করা হবে না এবং দেশের আয়করবিভাগ কেন এই সম্পদের হিসাব চাইবেন না, তা বিদগ্ধজনের কাছে কীছুতেই বোধগম্য নয়। এই বাস্তবতা কেবল সরকারি চাকুরেদের ক্ষেত্রে নয়, অন্যান্য পেশার লোকজনের ক্ষেত্রেও প্রকৃতপ্রস্তাবে বাস্তব হয়ে উঠে, এমনকি রাজনীতিবিদ জনপ্রতিনিধিদের ক্ষেত্রেও এমনটি হতে দেখা যায়।
বিদগ্ধজনেরা মনে করেন যে, সরকারি চাকুরের বেতনের লক্ষকোটিগুণ সম্পদের উৎস সরকারি সম্পদ নয়, সেটা সাধারণ মানুষের সম্পদ, সুতরাং সাধারণ মানুষের সে-সম্পদ লুট করার প্রতিকারে এগিয়ে আসা সরকার বা রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না, অর্থাৎ সাধারণ মানুষের সম্পদ সরকারের খাস জমির মতো নয়, বিষয়প্রপঞ্চটিকে অনেকটা চিন্তার এই ছাঁচে ফেলে আপাতত বিবেচনা করা যায় এবং প্রকারান্তরে এই প্রপঞ্চটি প্রমাণ করে যে, রাষ্ট্রযন্ত্রের মূল মালিক জনগণ রাষ্ট্রের মালিকানা হারিয়ে ফেলেছেন। যদি তাই না হবে তবে কেন, সমাজে অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ লোকেরা ভোগ করার প্রকাশ্য সাহস দেখাচ্ছে, যত্রতত্র সে-অর্থের অপব্যবহার করে সমাজে অস্থিরতা তৈরি করছে প্রতিনিয়ত এবং রাজনীতিসহ অর্থব্যবস্থাকে করে তুলছে শোষণ ও নির্যাতনের অপ্রতিরোধী হাতিয়ার। প্রশ্নটা তাই বরাবরের মতো থেকেই যায়, এই অপকর্মের প্রতিকার হবে কবে?

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com