‘সরকারি বিল/পুকুর ভোগ ও গাছ কর্তন নিয়ে গ্রামের এমেল রাজা চৌধুরী নামে এক যুবক প্রতিবাদ করেন। এ ঘটনায় একটি প্রভাবশালী মহলের রোষানলে পড়ে যান তিনি। এর জের ধরে পঞ্চায়েতের দোহাই দিয়ে পোস্ট অফিস ও মক্তবের নামে প্রতিবাদী যুবক ও তার প্রবাসী চাচা শেখ আব্দুল হক তারকে মিয়ার মালিকানা জমি দখলের চেষ্টাকালে বাধা দেওয়ায় প্রতিবাদী এমেল রাজা চৌধুরীর পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়।’ এই বয়ার্ণনাটা গত বৃহস্পতিবারের (১১ মার্চ ২০২১) দৈনিক সুনামকণ্ঠের এক সংবাদ প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। এইমর্মে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে অভিযোগ করা হয়েছে।
আমাদের দেশে এতো অগ্রগতি হয়েছে, আমরা নিজের অর্থে পদ্মাসেতু নির্মাণ করছি, এখন এই সুনামগঞ্জে ‘সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক’ ছয় লেন করার দাবিতে আমাদের প্রিয় সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ গত বৃহস্পতিবার আলফাত চত্বরে বিশাল গণসমাবেশ করেছেন। আমরা যে এগিয়ে চলেছি তার এক একটা নিদর্শন, সাধারণ মানুষ যে দেশের উন্নয়নের চিন্তা করেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নের চিন্তায় উত্তরোত্তর সচেতন হয়ে উঠেছেন তারই মূর্তিমান প্রকাশ এইসব ঘটনা এবং এখানেও এও উল্লেখ জরুরি যে, তাঁরা এখনও পুঁজিবাদী পশ্চাৎপদ চিন্তার নিগড়েই এখনও আবদ্ধ আছেন, যদিও সেই ১৯৫৪ সালেই বঙ্গবন্ধু পুঁজিবাদে বিশ্বাসী ছিলেন না, তিনি বিশ্বাস করতেন সমাজতন্ত্রে। আর অন্যদিকে প্রত্যন্ত গ্রামান্তরে কায়েমী স্বার্থবাদী কীছু প্রভাবশালী মানুষ এখনও সামন্তবাদী, পশ্চাৎপদ, প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তার ধারকবাহক হয়ে মানুষের উপর অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তারা কোথাও কোনও যুবকের অন্তঃসত্ত্বা প্রেমিকার সঙ্গে তার অশিতিপর দাদার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে, ধর্ষণের ঘটনায় বিবাহিত পুরুষকে ছাড় দিয়ে ধর্ষিতা কিশোরীকে দোররা মেরে হত্যা করছে, মসজিদের নামে গরিবের জমি বেদখল করে দিচ্ছে, একঘরে করছে কোনও পরিবারকে কিংবা একেবারেই গ্রাম ছাড়া করে ছাড়ছে। এইসব অপকর্মের বিপরীতে তারা ‘সরকারি বিল/পুকুর ভোগ ও গাছ কর্তন’ করছে কিংবা কোনও না কোনও দেশ-রাষ্ট্র-সমাজ-ধর্ম-আইন-নীতিবিরাধী অনৈতিক ও অবৈধ কাজে লিপ্ত আছে এবং কেউ প্রতিবাদ করলে তার বিরুদ্ধে সাজানো সালিশ বসিয়ে তাকে একঘরে করে শাস্তি দিচ্ছে, গ্রামছাড়া করছে এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে খুন করছে। এই তো কদিন আগে ধর্মপাশায় এক মৎস্যজীবীকে হত্যা করা হয়েছে এবং অভিযোগ উঠেছে বিশেষ এক প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে, এ নিয়ে আলফাত চত্বরে মানববন্ধনও হয়ে গেছে।
বিগদ্ধ মহল মনে করেন, গ্রামান্তরে আইনের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অবৈধ এইসব সালিশি বিচারের মাধ্যমে সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করা হচ্ছে এবং কায়েমী স্বার্থোদ্ধারের লক্ষ্যে এক শ্রেণির প্রভাবশালী মানুষ সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের উচিত দেশের বৃহত্তর দেশের স্বার্থরক্ষার্থে সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নকর এবংবিধ ঘটনাগুলোকে নজরদারির আওতায় আনা এবং তার যথাযথ প্রতিকারের ব্যবস্থা করা। অন্যথায় দেশের সকল মানুষের জন্য উন্নয়ন অর্থবহ হয়ে উঠবে না।
পরিশেষে বলি, প্রশাসনের কাছে এমেল রাজা চৌধুরীর আবেদন যেনো ব্যর্থ হয়ে না যায় এবং তিনি যেনো প্রতিকার লাভ করেন। তাছাড়া ভুলে গেলে চলবে না যে, এইসব অবৈধ ও যে-কোনও বিবেচনায় অনৈতিক ঘটনাকে উপেক্ষা করা হলে প্রশাসনের ভূমিকা প্রকারান্তরে মানবিক হয়ে উঠার পথ থেকে বিচ্যুতির দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে এবং উত্তর প্রজন্মের কাছে করে তোলবে বিতর্কিত।