1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০৯:১৩ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ব্যাধিগ্রস্ত ব্যাংকখাতকে সুস্থ করে তুলুন

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১১ মার্চ, ২০২১

গত মঙ্গলবারের (০৯ মার্চ ২০২১) দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ থেকে জানা যায় যে, ‘গত ৯ বছরে ব্যাংক খাতে আর্থিক অনিয়মের হার বেড়েছে ১৬ দশমিক ৮৬ গুণ।’ অর্থাৎ বলতে গেলে প্রায় ১৭ গুণ। উদ্ধৃত এই বাক্যটি একটি সাদামাটা ও সাধারণ বাক্য বটে, কিন্তু এর নিহিতার্থকে অবশ্যই সাধারণ বলা যাবে না কোনও যুক্তিতেই, একটু গভীরভাবে ভাবলেই বা তলিয়ে দেখলেই সহজহৃদবোধ হয় যে, এর নিহিতার্থর মধ্যে একটি অসাধারণত্ব নিহিত আছে। বাক্যটি পাঠ করার পর সুস্থ বোধবুদ্ধির যে-কেউ স্বাভাবিকভাবেই ভাবতে পারেন যে, দেশের ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য ভালো নেই, ইতোমধ্যে সেটি ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
অর্থনীতি মানুষের জীবনের চালিকাশক্তি, আর্থাৎ অর্থনীতি হলো বিস্তৃত অর্থে যে-কোনও সমাজের হৃৎপিণ্ড। এই হৃৎপিণ্ডটি পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হলো ব্যাংক। অর্থনীতির বিশাল বিস্তৃত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্ররূপে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকব্যবস্থা অসুস্থ হয়ে পড়লে সমগ্র সমাজব্যবস্থাও অসুস্থ হয়ে পড়তে বাধ্য। বাংলাদেশে পুঁজিবাদী উন্নয়নের বিশাল-বিপুল জোয়ারের পাশাপাশি স্ফীত হয়েছে ব্যাংকব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনিয়মের প্লাবন।
উন্নয়নের বাড়বাড়ন্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাংকখাতে অনিয়মও বেড়েছে সমতালে, এই দুর্নীতির বাড়বাড়ন্তকে ঠেকাবার কেউ ছিল না, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এখনও নেই এবং জানা কথা, পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে সর্বান্তকরণে, সর্বাবস্থায়, সবসময়ে।
অর্থনীতির একটি নিয়ম এই যে, ব্যাংকখাতের অনিয়ম-দুর্নীতি কর্কটরোগের (ক্যান্সার) মতো বিস্তার লাভ করে দেশের গোটা অর্থনীতিকে বিষিয়ে তুলে এবং প্রকারান্তরে দেশের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের সমাজবিরোধী অসংস্কৃত কর্মকাণ্ড উত্তরোত্তর কেবল বৃদ্ধি পেতেই থাকে। অর্থআত্মসাৎ, অর্থজালিয়াতি, ঋণখেলাপি, ভূঁইফোর ধনকুবের, বিদেশে অর্থপাচার ইত্যাদি অনৈতিক ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে সমাজের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের অনাচার-অবিচার, এমনকি শেষ পর্যন্ত রাজনীতির অঙ্গনটি পর্যন্ত কলুষিত হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় প্রশাসনও দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে, একজন থানাকর্মতর্কা প্রদীপকুমার দাশের আবির্ভাব হওয়াটা আর অসম্ভবের পর্যায়ে থাকে না বরং স্বাভাবিক হয়ে উঠে এবং তিনি অর্থসঞ্চয়ের বাসনায় প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে শেষ পর্যন্ত একজন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন। এইভাবে দেশ-সমাজ-রাষ্ট্র অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে সামাজিক-রাজনীতিক অর্থনীতি, এককথায় পুরো সংস্কৃতি অনিয়ম ও দুর্নীতির রাজা দুর্বৃত্তের নিয়ন্ত্রণকৌশলের কাছে শরণাগত হয়, আত্মসমর্পণ করে। সহজ কথায় বলা যায়, কোনও দেশে ব্যাংকখাতের দুর্নীতি পরিপক্কতা লাভ করার পর সেই দেশে কোনও হিতোপদেশ নয়, কোনও দৈববাণী নয়, মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে দুর্নীতি, সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে সন্ত্রাস।
বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে এটা একটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, বাংলাদেশে অর্থমন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ ব্যাংক নয়, দেশের ব্যাংকখাতের উপর বাস্তবে কার্যকর আছে বেসরকারি ব্যাংক মালিকচক্রের একক নিয়ন্ত্রণ। ব্যাংকখাতের উপর বেসরকারি এই নিয়ন্ত্রণকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে পর্যবশিত না করতে পারলে ব্যাংখাতের অনিয়ম-দুর্নীতির দুর্বৃত্তের মুখে লাগাম পরানো যাবে না, কিন্তু তার আগে অর্থমন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে হতে হবে পরিশুদ্ধ ও সম্পদ বিরাষ্ট্রীকরণের নীতি পরিহার করতে হবে নির্দ্বিধায়। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের একটাই কথা, ব্যাধিগ্রস্ত ব্যাংকখাতকে সুস্থ করে তুলুন, যে-কোনও মূল্যে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com