‘সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে বখাটের ছুরিকাঘাতে এক নার্স আহত হয়েছেন।’ সংবাদপ্রতিবেদনটি এই বাক্যটি দিয়েই শুরু হয়েছে এবং বিবরণে বলা হয়েছে, ‘রাত সাড়ে ১০টার দিকে … মিজানুর রহমান তাঁর এক সঙ্গীসহ … পারভিন নামের একজন আয়াকে খুঁজছিলেন। … খুঁজার কারণ জানতে চাইলে মিজান ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এবং শ্রাবন্তী কোচের (একজন কর্তব্যরত নার্স) সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন। একপর্যায়ে মিজান … ছুরি বের করে ওই নার্সের গলায় আঘাত করার চেষ্টা করেন। নার্স হাত তুলে ফেরাতে গেলে ছুরির আঘাত তাঁর বাঁ হাতে লাগে।’ এবংবিধ ঘটনা এখন আর সাধারণ মানুষের কাছে আপতিক বলে বিবেচিত হয় না, কারণ সমাজের মানুষদের মধ্যে একাংশ এতোটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রতিনিয়ত এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটেই চলেছে অবিরত। যে-কেউ বলতেই পারেন যে, হাসপাতালে সংঘটিত এই ঘটনাটি আমাদের বর্তমান সমাজের অধঃপতনের মাত্রাকে চিহ্নিত করেছে। কিংবা অন্যভাবে বললে বলতে হয়, আমাদের সমাজটি প্রকৃতপ্রস্তাবেই কতোটা নষ্ট হয়ে পড়ে হিংস্র হয়ে উঠেছে তার নিশানা তুলে ধরেছে। মানতেই হয় হাসপাতালও তার ব্যতিক্রম নয়, হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের দোষত্রুটি নিয়ে অনেক আন্দোলন হয়েছে, গণমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, তা হতেই পারে। বর্তমান মুনাফামুখি আর্থব্যবস্থায় সকল সামাজিক রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানের মতো হাসপাতালও দুর্নীতিমুক্ত কোনও স্থান নয়। কিন্তু দেশের এ দুর্নীতিদুর্গত অবস্থায় বিশেষভাবে চিকিৎসাক্ষেত্রের দুর্গত প্রেক্ষিত পরিসরের ভেতরেই এই হাসপাতাল নিরন্তর চিকিৎসাসেবা দিয়ে চলেছে সাধারণ মানুষকে, হোক তা নিতান্ত অপর্যাপ্ত, নিরন্তর এই অপর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তো কেউ অস্ব^ীকার করতে পারবে না। এই অপর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবাই তো এই হাসপাতালে এই নার্সরা না থাকলে সম্ভব হয়ে উঠবে না।
বলাই বাহুল্য, তর্কাতর্কির জের ধরে এই নার্সকেই ছুরিকাঘাত করা কোনও বিবেচনায়ই সঙ্গত কোনও কাজ তো নয়ই, বরং এবংবিধ গর্হিত কাজ আর হতেই পারে না। এর যথোপযুক্ত প্রতিকার অবশ্যই চাই। বিদগ্ধমহলের ধারণা, এবংবিধ অনাচার যাতে সংঘটিত না হয়, তার জন্যে যেমন হাসপাতাল এলাকার সাধারণ মানুষজনের সচেতন কার্যক্রম গ্রহণ করা দরকার, তেমনি প্রশাসনকেও বিশেষভাবে তৎপর হতে হবে এবং প্রতিকারে হতে হবে কঠোর।