সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা ও রিমান্ড সংক্রান্ত ১৬৭ ধারা নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ মঙ্গলবার সকালে এ রায় দেন। পূর্ণাঙ্গ রায়ে কিছু সংশোধনী থাকবে বলে জানা গেছে। আদালত জানিয়েছেন, এখন থেকে সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। আটকের ৩ ঘণ্টার ভেতর কারণ জানাতে হবে।
গত সপ্তাহে আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষে এ বিষয়ে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।
অন্যদিকে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন।
শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের উদ্দেশে বলেন, বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট রায়ে সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ১৩ বছর পার হয়ে গেলেও একটি নির্দেশনাও সরকার প্রতিপালন করেনি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ২৩ জুলাই ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করেন তৎকালীন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার (এসি) আকরাম হোসেন। ওই বছরের ২৪ জুলাই মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে মারা যান রুবেল।
এ ঘটনায় রুবেলের বাবা রমনা থানায় এসি আকরামসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলায় ২০০২ সালে বিচারিক আদালত এসি আকরামসহ ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দেন। এরপর তৎকালীন সরকার রুবেল হত্যা তদন্তের জন্য বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের সমন্বয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত শেষে কমিটি ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের পক্ষে কয়েকটি সুপারিশ করে।
এ সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিট মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল এ ব্যাপারে ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের নির্দেশনা :
হাইকোর্টের রায়ে ছয় মাসের মধ্যে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার ও ১৬৭ ধারায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রচলিত বিধান সংশোধনের নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি ওই ধারাগুলো সংশোধনের আগে সরকারকে কয়েক দফা নির্দেশনা মেনে চলার জন্য বলা হয়।
হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রথমে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল আবেদনে বলা হয়, এ দুটি ধারা সংশ্লিষ্ট যে আইনে রয়েছে, তা যথেষ্ট ও সঠিক। এজন্য আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের কোনো প্রয়োজন নেই। ২০০৪ সালে আপিল বিভাগ সরকারের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। তবে সে সময় সরকার পক্ষে আবেদন জানালেও হাইকোর্টের ওইসব নির্দেশনা স্থগিত করেননি আপিল বিভাগ।
এরপর সরকার আপিল দায়ের করলে তা ২০০৭, ২০০৮ ও ২০১০ সালে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এলেও শুনানি হয়নি। সর্বশেষ ২০ জানুয়ারি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এলে আদালত সরকার পক্ষকে হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানাতে বলেন। কিন্তু সরকার তা জানায়নি। এ অবস্থায় গত ২২ মার্চ আপিল শুনানি শুরু হয়।