মো. আমিনুল ইসলাম ::
বিগত বছরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এবার বেশি জমিতে বোরো চাষ করছেন সুনামগঞ্জের কৃষকরা। জেলার সবক’টি উপজেলার হাওরে হাওরে বোরো আবাদের চিত্র এখন চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চাষাবাদে ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষকদের। লাঙল জোয়ালের পাশাপাশি কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন কৃষকরা। হাল চাষ শেষে অনেকেই জমি প্রস্তুতের কাজ শেষ করেছেন। অনেক কৃষক জমিতে এখন চারা রোপণ করছেন। ব্রি ধান ২৮, ২৯ ও ৫২সহ আলোড়ন এবং জাগরণ জাতের ধানসহ অন্যান্য ধান এবার জমিতে ফলাচ্ছেন কৃষক।
গেল বছর ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে অকাল বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতিতে কৃষক নিরাশ হলেও এ বছর সেই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে নতুন উদ্যমে শ্রম দিচ্ছেন কৃষকরা। এবার চাষাবাদের আওতায় এসেছে অনেক পতিত জমিও। জেলার দিরাই, ধর্মপাশা, শাল্লা, জগন্নাথপুর, তাহিরপুরসহ অন্যান্য উপজেলার বোরো ধানের জমিগুলোতে এখন কৃষকদের কর্মব্যস্ততা। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যে এ বছর জেলায় বিগত বছরের চেয়ে বেড়েছে বোরো আবাদ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যে, এ বছর জেলার ২লক্ষ ১৫হাজার ৮১৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে চারা উৎপাদনের দিক বিবেচনা করে কৃষি বিভাগের আশা চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে বোরো আবাদ করবেন কৃষকরা। আর এর মধ্য দিয়ে এ বছর টার্গেট ছাড়িয়ে কমপক্ষে ২লক্ষ ২০হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে চাষাবাদ হতে যাচ্ছে বোরো ধান।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে গত শনিবারের হিসাব পর্যন্ত জেলায় ৮২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চারা লাগিয়েছেন কৃষকরা। এর মধ্যে বোরো ধান চাষাবাদের দিক থেকে এগিয়ে আছে ধর্মপাশা উপজেলা। এ বছর পর্যাপ্ত পরিমাণে সারের মজুদ রয়েছে বলেও জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। রয়েছে পানি সরবরাহেরও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। তাই অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার বোরো ধানের ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ।
এদিকে বোরো ধান চাষাবাদে অন্যান্য উপজেলার চেয়ে কোন অংশেই কম নয় সদর উপজেলার কৃষকরা। সারাদিনের সকল কর্মব্যস্ততা তাদের মাঠেই। ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা ফসলের মাঠে কাজে লেগে যাচ্ছেন শীত উপেক্ষা করেই। তবে শ্রমিক সংকটে ভুগছেন কৃষকরা। তাই পরিবারের সবাই মিলে চাষাবাদে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের কৃষক শফিক মিয়া বলেন, ‘কমবেশ সবের জমিনেই এখন ধানের চারা লাগানি শুরু হইছে। আমরা কয়েকজনে মিল্যা ধান লাগাই। সকালে ক্ষেতে কামে লাগলে আমরা বিকাল পর্যন্ত বহুত জমিতে লাগাইতে পারি। এইবার আমরা অনেক আশা কইরাই কাম করছি। গতবার তো সব পাইন্যে লইয়া গেছে।’
বিশ্বম্ভরপুর এলাকার কৃষক রহমত আলী বলেন, ‘গত কয়েক বছরের তুলনায় এই বছরে অনেক বেশি জমিনে ধান লাইছে গৃহস্থরা। গতবার যে জমিন পতিত পইরা আছিলো এইবার অনেকেই দেখলাম এইসব জমিনেও ধান লাগানি শুরু করছে। আশা করা যায় এইবার খুব ভালা বোরো ধান হইবো’।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. জাহেদুল হক বলেন, ‘বিগত বছরের তুলনায় এ বছর বোরো ধানের চাষাবাদ বেশি হচ্ছে। কৃষকরা অনেক চারা উৎপাদন করেছেন। চাষাবাদে এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২ লক্ষ ১৫ হাজার ৮১৭ হেক্টর জমি, কিন্তু কৃষকরা যে পরিমাণ চারা উৎপাদন করেছেন এবং পতিত জমিগুলোও চাষাবাদের আওতায় এনেছেন তাতে এ বছর কমপক্ষে ২ লক্ষ ২০হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ হবে বলে আশা করছি। আমরা কৃষকদেরকে মাঠপর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। সার ও পানির পর্যাপ্ততাও রয়েছে। আশা করছি আবহাওয়াসহ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এপ্রিলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনই হবে।’