স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জের ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা চোরাকারবারিদের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, মধ্যনগর, দোয়ারাবাজারসহ সীমান্তবর্তী ৫টি উপজেলার চোরাইপথ দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ, চিনি, প্রসাধনী, ফলমূলসহ প্রবেশ করছে মাদকদ্রব্য। এই অবৈধ ব্যবসায় সক্রিয় রয়েছে একাধিক চোরাকারবারি চক্র। অভিযোগ রয়েছে চোরাই সিন্ডিকেটের সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের কিছু নেতাকর্মীসহ জড়িত রয়েছে একাধিক ভুঁইফোড় সাংবাদিক। যাদের বেশিরভাগ আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার কার্ডধারী বলে জানা যায়। তাদের বিচরণক্ষেত্র কেবল সীমান্তকেন্দ্রিক বলে জানিয়েছেন সুধীজন।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার এসব নামধারী হলুদ সাংবাদিকরা সীমান্ত এলাকায় চোরাকারবারিদের ভারতীয় পণ্য প্রবেশে সহযোগিতা করে। সাংবাদিক নাম ভাঙিয়ে চোরাকারবারিদের কাছ থেকে জনপ্রতি চাঁদা গ্রহণ করে থাকে। তারা অবৈধ চালান পাচারের সময় আগে পিছে থেকে এসব পণ্য নিরাপদে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে দিতে সহযোগিতাও করে। এই ভুঁইফোড়দের কেউ কেউ সীমান্তে প্রভাব বিস্তার করে চোরাই ব্যবসার করে আসছে বলেও জানাগেছে।
তাছাড়া তারা রাতের বেলায় চোরাইপথে অবৈধ পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ তাড়া করে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নামধারী মিডিয়ার সুযোগে ‘সাংবাদিক নেতা’ বনেও অনেকে এই অপকর্ম করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা চোরাকারবারি চক্রের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা নিয়ে থাকে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সম্প্রতি তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েরগড় এলাকায় অবৈধ পেঁয়াজবাহী ট্রাক হতে সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদা গ্রহণের একটি ভিডিও এই প্রতিবেদকের হাতে আসে। ভিডিওতে দেখা যায়, তিন থেকে চারজন লোক গলায় গণমাধ্যমের পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে মুখে মাস্ক পরে ট্রাক আটকে চাঁদা তুলছে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে ডলুরা সীমান্তহাটে আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার একাধিক সাংবাদিককে সন্দেহজনক ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। এসময় লিটন নামের এক ভুঁইফোড় সাংবাদিক বর্ডার হাটে বিজিবি ও কাস্টমস সদস্যদের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিবি’র এক সদস্য জানান, লিটন নামে এক সাংবাদিক প্রভাব দেখিয়ে বর্ডার হাটে প্রবেশ করে অবৈধভাবে ক্রয়কৃত পেঁয়াজের বস্তা বের করার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে তার সাথে বিজিবি ও কাস্টমস প্রতিনিধির বাকবিত-া হয়। বিজিবির এই সদস্য জানান, লিটনসহ কয়েকজন প্রতি হাটবারে বর্ডারহাটে আসা-যাওয়া করে। তারা পেঁয়াজ ও চিনির চালান আনতে চান।
এদিকে সম্প্রতি তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েরগড়ে চোরাকারবারিদের কাছে চাঁদা চাওয়ায় লিটন নামের ওই কথিত সাংবাদিককে আটকে রাখে চোরাকারবারিদের একটি চক্র। পরে স্থানীয় এক সাংবাদিকের হস্তক্ষেপে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয় বলে জানা যায়।
এ ব্যাপারে লিটন খান নামের ওই কথিত সাংবাদিকের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।