সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিসংখ্যান মতে যা গতবছরের তুলনায় বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। মূলত ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা করতে আসা পর্যটকদের সংখ্যা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সূত্র থেকে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে মেডিকেল ভিসা পেয়ে ছিল ৩,০৪,০৬৭ জন বাংলাদেশি নাগরিক। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেই ভিসা প্রদানের শতকরা হার বেড়েছে প্রায় ৪৭.৯ শতাংশ। ওই অর্থবছরে মেডিকেল ভিসা প্রদান করা হয়েছে ৪,৪৯,৫৭০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের অন্য প্রতিবেশি দেশ- মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান এবং মিয়ানমার থেকে চিকিৎসা করতে আসা পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
ভারতের সরকারি তথ্য বলছে, ২০২৩-২০২৪ সালে শ্রীলঙ্কান নাগরিকদের জন্য কেবলমাত্র ১,৪৩২টি মেডিকেল ভিসা দিয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১১ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ সালে ভিসা দেওয়া হয়েছিল ১,৬২২ জনকে। পাশাপাশি, ২০২৩-২০২৪ সালে মিয়ানমারের নাগরিকরা ৩,০১৯টি মেডিকেল ভিসা পেয়েছেন, যা তার আগের বছরের তুলনায় ৪ শতাংশ বেশি, মেডিকেল ভিসা প্রদানের সংখ্যাটা ছিল ২,৯০৪।
অন্যদিকে, ২০২৩-২৪ সালে মালদ্বীপের ১,৬৪৫ জনকে মেডিকেল ভিসা দেওয়া হয়েছিল, তার আগের অর্থবছরে সেই সংখ্যাটা ছিল ১,৪৪১। একইভাবে পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য ২০২৩-২৪ সালে মাত্র ৭৬ টি মেডিকেল ভিসা ইস্যু করা হয়েছিল, তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ সালে মেডিকেল ভিসা দেওয়া হয়েছিল ১০৬ জনকে।
এই প্রসঙ্গে ম্যাক্স হেলথকেয়ারের সিনিয়র ডিরেক্টর এবং চিফ সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং অফিসার আনাস আব্দুল ওয়াজিদ বলেন, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার কারণে আমরা পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে রোগী পাচ্ছি না। ভারত সরকার এই দেশগুলোর রোগীদের ভিসা দেয় না। তবে আমাদের প্রতিবেশী দেশ নেপাল, মিয়ানমার থেকে ভারতে আসা রোগীদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে ওয়াজিদ জানান, বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীরা মূলত চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, কলকাতা এবং দিল্লিতে ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশের ভারতীয় হাসপাতালগুলির বরাবরই একটা সুখ্যাতি আছে। সেদেশের রোগীরা সাধারণত ট্রান্সপ্ল্যান্ট, কার্ডিয়াক সায়েন্স, নিউরো, অর্থো এবং অনকোলজি সংক্রান্ত চিকিৎসার জন্য ভারতে আসে।
তিনি বলেন, তবে ভারতে লোকসভা নির্বাচনের সময়, বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীদের আগমনে সাময়িক ভাটা পড়েছিল কারণ সে সময় কম ভিসা ইস্যু করা হয়েছিল। তাছাড়া মেডিকেল ভিসার জন্য ভারতীয় দূতাবাস কর্তৃপক্ষের কাছে প্রচুর আবেদন আসে। দূতাবাস কর্তৃপক্ষ সেই অনুরোধ রাখার চেষ্টা করে। যার ফলে ভিসা পেতে রোগীদের জন্য কিছুটা অপেক্ষা করতে হয়। এছাড়া ভারতে আসা বাংলাদেশিদের বৃদ্ধির কারণে বিমান সংযোগেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিমান পরিষেবা বাড়িয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া।
২০২৩ সালের জুন মাসে সপ্তাহে যেখানে তিনটি ফ্লাইট চলতো বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে ১৪ টি বিমান চলাচল করছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে ভারত বাংলাদেশ রুটে ছোট কম আসনের যাত্রীবাহী বিমান চালায় এয়ার ইন্ডিয়া। পাশাপাশি, অন্য বিমান পরিবহন সংস্থার মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশ রুটে সপ্তাহে ৩৫টি বিমান চালায় ইন্ডিগো। অন্যদিকে ১১টি বিমান চালায় ভিস্তারা এয়ারলাইন্স।
এভিয়েশন স¤পর্কিত বিষয় নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা সিরিয়াম এর তথ্য অনুযায়ী সামগ্রিকভাবে ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশের মধ্যে সপ্তাহে ১১৩ টি বিমান চলাচল করে। গত আর্থিক বছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিমান চলাচলের শতকরা হার ১০.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানা গেছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরেও চিকিৎসা পর্যটনকে আরও সহজ করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয় ভারত সরকার। বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারত ই-মেডিকেল ভিসা চালু করবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতের এই ঘোষণায় ভারতে চিকিৎসা করতে আসা বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্স ইন্ডিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর (হেলথ কেয়ার) প্রীত মাতানি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে চিকিৎসার জন্য আসেন তারা মূলত স্বল্প অর্থে চিকিৎসা পরিষেবা, জটিল রোগের জন্য উচ্চ মানের চিকিৎসা পরিষেবার কারণে ভারতে আসেন। বিভিন্ন দেশ থেকে চিকিৎসা পর্যটকদের ভারতে আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সে স¤পর্কে প্রীত মাতানির অভিমত এক্ষেত্রে বিনামূল্যে মেডিকেল ভিসা প্রদান এবং আবেদন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে। চিকিৎসা স¤পর্কিত কারণে যেসব পর্যটকরা বিদেশ থেকে ভারতে আসেন সেই স¤পর্কিত বিষয় খতিয়ে দেখা বা পরিষেবা প্রদানের জন্য একটি নোডাল বডি তৈরিরও সুপারিশ করেছেন মাতানি।
কলকাতা মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ইউনিট প্রধান সোমব্রত রায় জানান, কোভিড মহামারীর পরে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধির আর শতকরা ১০ শতাংশ। এই বৃদ্ধির পিছনে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যে ভৌগোলিক নৈকট্য, সরাসরি ট্রেন এবং বাস পরিষেবা এবং সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও খাবারের মিল। আগে বাংলাদেশি রোগীরা চিকিৎসা পরিসেবা নিতে প্রায়শই দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলিতে চলে যেতেন। কিন্তু কোভিড বিধিনিষেধের কারণে তারা অনেকেই পশ্চিমবঙ্গের দিকে ঝুঁকেছে। বর্তমানে চিকিৎসা পরিষদের ক্ষেত্রে তাদের কাছেই পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে কলকাতা।