বিশেষ প্রতিনিধি ::
সকাল ৯টা। পাহাড়ি ঢলে বিধ্বস্ত খাইমতিয়র সড়কে গিয়ে দেখা যায় ভাঙ্গনের দুই দিকে মানুষজন দাঁড়িয়ে আছেন। এর মধ্যে কয়েকজন শিক্ষিকাকেও দেখা গেল। উপচানো সুরমা নদী থেকে তীব্র বেগে স্রোত আসছে সড়কের ভাঙা অংশ দিয়ে। আমন ক্ষেত দিয়ে নেমে তিনজন শিক্ষিকা একজন আরেক জনের হাত ধরে স্রোত কেটে যাচ্ছেন। তবে সড়কে ওঠার সময় দেখা গেল বিপত্তি। তখন উপর থেকে একজন পুরুষ এগিয়ে এসে শিক্ষকের হাত ধরে উপরে তুললেন। এই শিক্ষিকার নাম স্মৃতি শ্যাম পুরকায়স্থ। তিনি বাঁধনপাড়া বাসা থেকে সকালে বেরিয়ে একাধিক ভাঙন ও পাহাড়ি ঢলের স্রোত কেটে গোদারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছেন।
এলাকাবাসী জানালেন, ধারারগাঁও থেকে খাইমতিয়র পর্যন্ত সড়কটি ৯টি স্থানে ভেঙে গেছে। পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছে ভাঙন কবলিত অংশের মাটি, ঢালাই ও ইট-সুরকি। শিকড়শুদ্ধ কিছু বৃক্ষ সড়কের মাটি কামড়ে আছে। এখন এই পথে গাড়ি চলাচল বন্ধ আছে। কেউ নৌকায়, কেউ পায়ে হেঁটে আমন জমিন মাড়িয়ে শহরে যাতায়াত করেন। তবে নৌকা সহজে মিলেনা। হঠাৎ পেলেও ভাড়া দ্বিগুণ হাঁকানো হয়।
পৌনে ১০টায় গোদারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ৫ জন শিক্ষিকা বসে আছেন। শ্রেণিকক্ষে একজনও শিক্ষার্থী নেই। স্কুলে এর আগের দিন পানি ওঠেছিল। জরুরি জিনিষপত্র রক্ষার জন্য বেঞ্চের উপর রাখা হয়েছে।
অভিভাবক শামীম মিয়া জানালেন, যথাসময়ে শিক্ষকরা স্কুলে এসেছেন। কিন্তু অভিভাবকরা রাস্তাটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াও কোনো শিক্ষার্থীকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। তাছাড়া একদিন আগেও স্কুলে পানি ছিল। আমি কিছু লোক নিয়ে এসে বেঞ্চের উপর জরুরি জিনিষ রেখে রক্ষা করেছি। রাস্তাঘাট ঠিক না হলে অভিভাবকরা এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠাতে সাহস পাবেন না।
সহকারী শিক্ষিকা স্মৃতিশ্যাম পুরকায়স্থ বলেন, সুরমা নদী লাগোয়া সড়কটির বিভিন্ন অংশ পানির তোড়ে ভেসে গেছে। নদীতে পানি বেশি থাকায় স্রোতও বেশি। তারপরও স্কুলে যেতে হয়েছে। ৯টি ভাঙ্গন পেরিয়ে, স্রোত কেটে ভীষণ ঝুঁকি নিয়ে আমরা স্কুলে এসেছি। এই দুর্ভোগ সয়ে আমরা স্কুলে আসলেও বাচ্চাদের পাঠাতে ভয় করছেন অভিভাবকরা। তাই স্কুলে কোনও শিক্ষার্থী আসেনি।
গোদারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইলোরা দে বলেন, সড়কের উপর দিয়ে সুরমার নদীর জল গড়িয়েছে। অনেক অংশ ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। গাড়ি চলাচল করেনা। বড়ো ভাঙ্গা, স্রোত পেরিয়ে আমরা স্কুলে এসেছি। জরুরি ভিত্তিতে
সড়কটি সংস্কার করে যাতায়াত ব্যবস্থা চালু রাখার দাবি জানাই।
গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বলেন, দুইবারের বন্যায় আমাদের রাস্তার বেশিরভাগ অংশই ঢলের তোড়ে ভেসে গেছে। আমাদের স্কুলেরও ক্ষতি হয়েছে। স্কুলে আসার মুখে বড়ো ভাঙ্গন। দেখলেই ভয় লাগে। এই অবস্থায় আমরা কিভাবে শিশুদের পাঠাবো?
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহন লাল দাস বলেন, গতকাল পর্যন্ত আমাদের ৫৯টি স্কুলে আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যার্তরা আছেন। গতকালও ২৩৮টি স্কুলে পানি ছিল। এই অবস্থায় শিক্ষকরা স্কুলেও যেতে পারলেও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা পাঠাতে ভয় করছেন। তবে পানি কমলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।