সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
চলতি সপ্তাহে বেশ কয়েক দিন টানা ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর মধ্যে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় নদ-নদীর পানি বেশির ভাগ এলাকায় বিপৎসীমার ওপরে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কার কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, সিলেটে আগামী ৭২ ঘণ্টা ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এ সময় সিলেটের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কাও রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার দুপুর ১২টায় সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্ট ও কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে যথাক্রমে পানি বিপৎসীমার ৮৫ ও ৮৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেখানে রোববার সন্ধ্যায় কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। আর সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি রোববার সন্ধ্যায় বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও সোমবার দুপুরে ৫৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আর লুবা নদীর লুবাছড়া, সারি নদীর সারিঘাট, ডাউকি নদীর জাফলং, সারিগোয়াইনের গোয়াইনঘাট ও ধলাইর ইসলামপুর পয়েন্টে পানি রোববার সন্ধ্যায় যেখানে যথাক্রমে ১২.৮৭, ১০.৫২, ১০.১৯, ৯.৬০ ও ৯.৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়, সেখানে সোমবার দুপুরে ১৪.৪৩, ১২.৩৫, ১১.৬৯, ১০.৩৬ ও ১০.২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বাকি নদীগুলোর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির কারণে আবারও বাড়ছে সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটাসহ সব নদ-নদীর পানি। সোমবার দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ জেলা শহরে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সেই সঙ্গে ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে নি¤œাঞ্চলের বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক। সড়কে পানি ওঠায় জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে তাহিরপুর উপজেলার। তলিয়ে গেছে পৌর শহরের উত্তর আরপিননগর, সাহেববাড়ী ঘাট, তেঘরিয়া, বড়পাড়া নদীর পাড়সহ বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তাঘাট।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের (আইএমডি) ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) ৩১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর এর আগের দুদিন ১৮৬ ও ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর কারণে এই পানি বাংলাদেশে বিভিন্ন নদনদীর মাধ্যমে প্রবেশ করে সিলেটে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া আগামী তিন দিনে ৯৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) ৩৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। আর সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
দেশে চলমান বৃষ্টিপাত আগামী সপ্তাহজুড়ে চলতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর মধ্যে উজানের পাহাড়ি ঢলে উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে উঠেছে। এর ফলে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারী বর্ষণের সতর্কবাণীতে বলা হয়, বাংলাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ৩০ জুন বিকেল ৪টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় ভারী (২৪ ঘণ্টায় ৮৮-৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারী (২৪ ঘণ্টায় >>৮৯মিমি) বর্ষণ হতে পারে। ভারী বর্ষণজনিত কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা আছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জে সুরমা, কুশিয়ারা, পুরাতন সুরমা, সারিগোয়াইন নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। এর সঙ্গে উত্তরের নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। এর ফলে জুলাইয়ের শুরুর দিকে এসব এলাকার নি¤œাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যার শঙ্কা রয়েছে।