স্টাফ রিপোর্টার ::
মেঘালয়ের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর দুটি পয়েন্টে পানি বেড়েছে। তবে এখনো বিপদসীমার নিচে আছে পানি। এবার পানি বাড়লে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রবিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৮ সেন্টিমিটার বেড়েছে। সন্ধ্যায় সুরমার পানি বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে একই নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এই পয়েন্টেও সুরমার পানি বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে গতকাল শনিবার থেকে ৭২ ঘণ্টার পূর্ভাবাসে বর্ষণ ও ঢলে নদ-নদীর পানি আরো বাড়ার কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীর পানি শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ পানিউন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৮৬ মিলিমিটার। এর আগের দিন হয়েছে ১৪১ মিলিমিটার। ১০০ মিলিমিটারের উপরে বৃষ্টিপাত হলে ভারী বর্ষণ বলে। যার ফলে এই বৃষ্টির পানি ৪-৬ ঘণ্টায় চলে আসে সুনামগঞ্জে। তাই সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, নদ-নদীর পানি এখনো বিপদ সীমার নিচে থাকলেও আরো বাড়তে পারে। কারণ মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টিপাতের সঙ্গে আমাদের এখানে ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগামী ৬ জুলাই পর্যন্ত পানি বাড়ার সম্ভাবনা আছে এবং বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা আছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী সজল কুমার রায় জানান, আগামী তিন দিনে দেশের ভেতরে ও উজানে ভারতের রাজ্যগুলোতে অতিভারী বৃষ্টিপাতের আভাস রয়েছে। আর দেশের নদ-নদীর পানির সমতল বেশি বৃদ্ধি পায় ভারতের বৃষ্টিপাতের কারণে। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষের দিকে ব্রহ্মপুত্র বেসিনের পারি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছতে পারে। আর মেঘনা বেসিনের নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। যেহেতু বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি ভারতে বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে। তাই কেমন বৃষ্টি হবে তার ওপর নির্ভর করবে বড় বা দীর্ঘমেয়াদী বন্যা হবে কি-না। তবে আমরা মধ্যমেয়াদী বন্যার কথা বলতে পারি।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল আছে, যা বুধবার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। গঙ্গা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে পদ্মা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল পাচ্ছে, যা সোমবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া মনু, খোয়াই ব্যতীত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি সমতলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে, এ সময়ে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোর পানি সমততে বৃদ্ধি পেতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা, পুরাতন-সুরমা, সারিগোয়াইন নদীগুলোর পানি সমতলে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার কতিপয় নি¤œাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
পাউবো জানিয়েছে তাদের পর্যবেক্ষণের ১১০টি স্টেশনের মধ্যে রোববার পানির সমতল বেড়েছে ৬৬টিতে, কমেছে ৪৩টিতে। একটি স্টেশনের তথ্য পাওয়া যায়নি। কুশিয়ারার পানি মারকুলিতে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।