1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৪:১৩ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা পাচ্ছেন বিজন সেনরায়সহ ৫ গুণীজন

  • আপডেট সময় রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার ::
হাওর জেলা সুনামগঞ্জে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিসহ নানা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ‘সুনামগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা ২০২৩’ পাচ্ছেন সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক বিজন সেন রায়সহ ৫ গুণীজন। আজ রবিবার (৩০ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাসনরাজা মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাঁদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হবে। ৫ গুণীজনকে সম্মাননা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জ জেলা কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী।
সম্মাননাপ্রাপ্ত গুণীজনরা হলেন- সৃজনশীল সংস্কৃতি গবেষক ক্যাটাগরিতে দীপক রঞ্জন দাস, সৃজনশীল সংগঠক ক্যাটাগরিতে বিজন সেন রায়, লোকসংস্কৃতি ক্যাটাগরিতে মো. নেসারুদ্দিন, কণ্ঠসংগীতে মো. শাহজাহান সিরাজ ও যন্ত্রসংগীত ক্যাটাগরিতে মো. কুতুব উদ্দিন। ১১ সদস্যবিশিষ্ট বাছাই কমিটি কর্তৃক সম্মাননা প্রদানের জন্য ৫ গুণীজনকে মনোনীত করা হয়। সম্মাননার জন্য মনোনীত এই ৫ গুণী সুনামগঞ্জের সংস্কৃতি, সাহিত্য ও শিল্পের নানা শাখায় দীর্ঘদিন ধরে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন।
সৃজনশীল সংস্কৃতি গবেষক ক্যাটাগরিতে দীপক রঞ্জন দাস সহজ-সরল জীবনযাপন আর জ্ঞানের প্রতি গভীর অনুরাগ তাঁকে সুনামগঞ্জের সর্বমহলে একজন শ্রদ্ধাভাজন প-িতব্যক্তি হিসেবে সুপরিচিতি প্রদান করেছে। সুনামগঞ্জের শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ দীপক রঞ্জন দাস ১৯৪২ সালে সুনামগঞ্জ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁদের আদি নিবাস ছিল সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার ছৈলা গ্রামে। বাবার নাম ক্ষীতিন্দ্র কুমার দাশ এবং মাতার নাম গৌরী রাণী দাশ। পিতা ক্ষীতিন্দ্র কুমার দাশ বুলচান্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক ছিলেন। দীপক রঞ্জন দাস ১৯৬৩ সাল থেকে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন এবং একজন আদর্শবান শিক্ষক হিসেবে সুনামের সাথে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। সুদীর্ঘ ৩৮ বছর শিক্ষকতা পেশায় দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে বুলচান্দ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বাংলা সাহিত্যের শিক্ষক হলেও ইংরেজি সাহিত্যেও অগাধ জ্ঞানের অধিকারী তিনি। তিনি কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষক ও নিরীক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষক দিবসে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে প্রবীণ শিক্ষক হিসেবে সম্মাননা প্রদান করা হয়। শিক্ষকতার পাশাপাশি দীপক রঞ্জন দাস একজন সুলেখ হিসেবেও সুনাম অর্জন করেছেন। জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্র ও সাময়িকীতে তিনি নিয়মিত লিখতেন এবং বর্তমানেও তা চলমান। সাহিত্যের ও ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান সংগ্রহ ও সংরক্ষণে তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ আলোকিত মানুষ। তাঁর রচিত “পণাতীর্থ ও শ্রী অদ্বৈত” নামে একটি বই ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখা বই স্কুলের পাঠ্যবই প্রকাশিত হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে জুনিয়র ফাংশনাল ইংলিশ, মাধ্যমিক বাংলা প্রথম পত্র সহায়িকা অন্যতম। এছাড়াও তিনি সুনামগঞ্জ পরিচিতি (ইতিহাস) ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন।
সৃজনশীল সংগঠক ¬বিজন সেন রায় ১৯৫৬ সালের ৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার মান্দারকান্দি গ্রামে। তাঁর পিতার নাম বনমালী সেন রায় এবং মাতা মানদা সেন রায়। স্কুলজীবন শেষ করে তিনি সুনামগঞ্জ কলেজে ১৯৭২ সালে ভর্তি হন। জড়িয়ে পড়েন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে। ১৯৭৭ সালে সিলেট এমসি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে (অনার্স) কোর্সে ভর্তি হন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের ওপর তৎকালীন সরকার নির্যাতন শুরু করে। এসময় সুনামগঞ্জেও তখনকার ছাত্র ইউনিয়ন নেতা হুমায়ুন কবীর, রাণী রায়, বেলায়েত হোসেন, আব্দুর কাদিরসহ অসংখ্য নেতাকর্মীর ওপর অত্যাচার চলে। তখন অনেককে পুলিশ ধরে নিয়ে নির্যাতন করে এবং তাদের কাছ থেকে রাজনীতি না করার শর্তে মুচলেকা আদায় করে। এ অবস্থায় অধিকাংশ নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে যান। এক পর্যায়ে সুনামগঞ্জ ছাত্র ইউনিয়ন নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে। সংগঠনের এই দুঃসময়ে সিনিয়র নেতৃবৃন্দের নির্দেশে সিলেট এমসি কলেজের পাঠ শেষ না করেই পুনরায় সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে ডিগ্রি কোর্সে এসে ভর্তি হন বিজন সেন রায়। তখন সমমনাদের সাথে নিয়ে বিজন সেন রায় ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীদের সংগঠিত করেন এবং সুনামগঞ্জে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির পুনর্জাগরণ ঘটান। দীর্ঘদিন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে শাহানা-বিজন পরিষদ অংশ নেয়। তখন ভিপি পদে শামছুন নাহার বেগম শাহানা জয়ী হন এবং জিএস পদে বিজন সেন রায় মাত্র ৫ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। ছাত্রজীবন শেষে বিজন সেন রায় সুনামগঞ্জের প্রগতিশীল ধারার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজ শুরু করেন। ২০০৮ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত জেলা উদীচী’র সভাপতি পদে পরপর দুইবার দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সাল থেকে অদ্যাবধি তিনি জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘর আসরের সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
বিজন সেন রায় কলেজ জীবনেই সাংবাদিকতা ও লেখালেখিতে যুক্ত হন। সে সময় তিনি দৈনিক সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেন। নব্বই দশকে সাপ্তাহিক সুনামগঞ্জের কাগজ-এর প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে তাঁর সম্পাদনা ও প্রকাশনায় সাপ্তাহিক সুনামকণ্ঠ যাত্রা শুরু করে। ২০১৫ সালে সাপ্তাহিক থেকে দৈনিক পত্রিকায় রূপান্তর হয় সুনামকণ্ঠ।
নিবিষ্ট সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠক হিসেবে বিজন সেন রায় জেলায় একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে সুপরিচিত। তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমির বর্তমান পরিষদের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিজন সেন রায় হাওর আন্দোলনের সাথেও জড়িত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। কমরেড প্রসূন কান্তি বরুণ রায় ও কমরেড নজির হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জেলেদের স্বার্থ আদায়ে ‘ভাসানপানি’ আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন তিনি। বিজন সেন রায় তাঁর পত্রিকার সংগঠন ‘সুনামকণ্ঠ পাঠক ফোরাম’-এর ব্যানারে সুনামগঞ্জ মহিলা কলেজে ডিগ্রি কোর্স চালু করতে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলেন। যার ফলশ্রুতিতে সুনামগঞ্জ মহিলা কলেজে ২০১১ সালে ডিগ্রি কোর্স চালু হয়। তিনি সুনামকণ্ঠ সাহিত্য পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষকেরও দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি ও বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য। বিভিন্ন সময়ে সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিজন সেন রায় দুই পুত্রের জনক। তাঁর স্ত্রী রূপশ্রী সেন রায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে কর্মরত ছিলেন। ২০২১ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
লোকসংস্কৃতি ক্যাটাগরিতে মনোনীত মো. নেসারুদ্দিন একজন নিভৃতচারী লোকসঙ্গীত শিল্পী। তিনি নীরবে সঙ্গীত চর্চা করে চলছেন। এছাড়া কণ্ঠসংগীতে সম্মাননা পাচ্ছেন মো. শাহজাহান সিরাজ। যন্ত্রসংগীতে সম্মাননার জন্য মনোনীত সুনামগঞ্জ শহরের মো. কুতুব উদ্দিন সিলেট বিভাগের একজন বিশিষ্ট বংশীবাদক। তিনি এই অঞ্চলের প্রসিদ্ধ বাউল মহাজনদের সঙ্গে বাঁশি বাজিয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ বেতারের যন্ত্রসঙ্গীতের সিনিয়র শিল্পী হিসেবে তিনি কর্মরত আছেন।
শিল্পকলা সম্মাননার বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী বলেন, ১১ সদস্যবিশিষ্ট বাছাই কমিটি দীর্ঘ সময় নিয়ে যাচাই-বাছাই করে গুণীজনদের সম্মাননার জন্য মনোনীত করেছেন। এই গুণীজনরা জেলার সর্বজন শ্রদ্ধেয়। তারা স্থানীয় সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে নানাভাবে কাজ করছেন। তাদেরকে সম্মাননা দিতে পেরে আমাদেরও ভালো লাগছে।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com