শহীদনূর আহমেদ ::
হত্যা নাকি মৃত্যু সেই রহস্য উদ্ঘাটনে আদালতের নির্দেশে জগন্নাথপুরে সমাধি থেকে উত্তোলন করা হলো তরুণ লিংকন বিশ্বাসের (১৭) লাশ। ঘটনার ৬ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার বিকেলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রওশন আহমেদের নেতৃত্বে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়দের উপস্থিতিতে উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের নয়াসন্দর গ্রামের সমাধি থেকে লিংকন বিশ্বাসের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলন করে। সন্তানের লাশ উত্তোলন দেখে আহাজারি করছিলেন স্বজনরা।
জানা যায়, জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য লুলু মিয়ার খামারবাড়িতে শ্রমিকের কাজ করতেন নয়াসন্দর গ্রামের শ্রীকান্ত বিশ্বাসের পুত্র লিংকন বিশ্বাস। গত ২২ জুন দুপুরে খামারবাড়িতে কর্মরত অবস্থায় লিংকন বিশ্বাসের মৃত্যু হয়। খামার কর্তৃপক্ষের দাবি আমগাছে আম পাড়তে গিয়ে পা পিছলে পড়ে পুকুরের পানিতে ডুবে গোবরের গাদায় আটকে মৃত্যু হয় লিংকন বিশ্বাসের। পরে প্রশাসনকে না জানিয়ে লিংকনের মরদেহ সমাধিস্থ করা হয়।
পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি, তরুণ লিংকনের মৃত্যুর পেছনে অন্য কোনো রহস্য থাকতে পারে। মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করলে আসল রহস্য বের হয়ে আসবে। বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হলে জগন্নাথপুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন নিহতের বাবা শ্রীকান্ত বিশ্বাস। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে মরদেহ সমাধি থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। আদালতের নির্দেশে বৃহ¯পতিবার বিকেলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সমাধি থেকে মরদেহ উত্তোলন করে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ।
এদিকে লিংক বিশ্বাসের স্বজনদের দাবি, লিংকন সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল। সে সাঁতার জানতো। ছোট্ট আম গাছ থেকে পড়ে মৃত্যু হতে পারে না। এর পেছনে অন্যকোনো রহস্য থাকতে পারে। মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
লিংকনের বোন পূর্ণিমা বলেন, আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত হলে এটি বের হয়ে আসবে।
লিংকন বিশ্বাসের বাবা শ্রীকান্ত বিশ্বাস বলেন, আমি অসহায় মানুষ। আইন-আদালত বুঝি না। আমাকে তারা যা বলছে বিশ্বাস করেছি। কিন্তু আমার ছেলে পানিতে ডুবে মারাগেছে এটি বিশ্বাস করি না। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে।
চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, লিংকন বিশ্বাস নামের যে ছেলেটির কিছুদিন পূর্বে দাফন হয়েছিল আদালতের নির্দেশে তার লাশ উঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
সহকারী পুলিশ সুপার (জগন্নাথপুর সার্কেল) সুভাশীষ ধর বলেন, কিছুদিন আগে লিংকন বিশ্বাস নামের একটি ছেলে মারা গিয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। মামলার তদন্তের স্বার্থে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ করে ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।