1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ০৭:১৯ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সুনামগঞ্জের জনসংখ্যা ২৬ লাখ ৯৫ হাজার ৪৯৬, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীরা পিছিয়ে

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০২৪

শামস শামীম ::
সারাদেশের ন্যায় সুনামগঞ্জেও প্রথম ডিজিটাল জনশুমারী ও গৃহগণনা ২০২২’র জেলা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জেলা রিপোর্ট প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে মোড়ক উন্মোচন করেন প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিবৃন্দ। প্রকাশিত রিপোর্টে সংখ্যার দিক দিয়ে নারীরা এগিয়ে থাকলেও শিক্ষায় তারা পিছিয়ে। মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারেও নারীদের অবস্থান পিছনে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়েও নারীদের অবস্থান অনেক পিছনে। এছাড়াও পরিসংখ্যানে এখনো ঝুলন্ত পায়খানা ব্যবহার, নদী, হাওর ও পুকুরের পানি পান, বিদ্যুৎহীন লোকজনও রয়েছে বলে তথ্য উপস্থাপন করা হলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিসংখ্যান আশাব্যাঞ্জক। গত এক দশকে জনসংখ্যার হার ২.০২ থেকে এবারের জরিপে ০.৭৮ ভাগে এসে পৌঁছেছে। অন্যদিকে জেলায় জনসংখ্যার দিক এগিয়ে ছাতক উপজেলা ও পিছিয়ে মধ্যনগর উপজেলা। ছাতক উপজেলায় ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭৯৭ জন এবং মধ্যনগরে ৯৬ হাজার ২৩৭জন লোক বসবাস করেন।
জেলা রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ জেলায় মোট জনসংখ্যা ২৬ লাখ ৯৫ হাজার ৪৯৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১১ লক্ষ ২৫ হাজার ৪১১জন। ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে ৭৭.৬০ ভাগ পুরুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। এর বিপরীতে ৪৮.০৮ ভাগ নারী মোবাইলফোন ব্যবহার করেন। একই বয়সী ৩৭.২১ ভাগ পুরুষ ও ১৭.৪৯ ভাগ নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। সংখ্যায় বেশি থাকলেও প্রযুক্তি ব্যবহারে নারীদের চেয়ে পুরুষরা এগিয়ে আছেন। এভাবে শিক্ষা দীক্ষায়ও নারীরা পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে আছেন। পুরুষের স্বাক্ষরতার হার ৬৬.১৪ ভাগ এবং নারী ৬৩.৭৬ ভাগ। জেলায় গড় শিক্ষার হার ৬৪.৯২ ভাগ।
রিপোর্টে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত পরিসংখ্যানে জানানো হয়, জেলার ৯৮.৭২ ভাগ লোক বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করছেন। ১.২৮ ভাগ লোক বিদ্যুৎহীন আছেন। জেলার ১৬.৭০ ভাগ লোকজন এখনো ঝুলন্ত পায়খানা ব্যবহার করছে, ১.৩৬ ভাগ পুকুর, নদী, খাল ও লেকের পানি ব্যবহার করছেন বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও আবাসন সংক্রান্ত পরিসংখ্যানে দেখানো হয় জেলার ৭৩.৯৬ ভাগ মানুষ কাঁচা ঘরবাড়ি, ১০.৪৫ ভাগ পাকা ঘরবাড়ি, ১৪.৫৬ ভাগ মানুষ সেমিপাকা এবং ১.০২ ভাগ ঝুপড়ি ঘর ব্যবহার করেন।
প্রবাসীদের পরিসংখ্যান বিষয়ে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি প্রবাসী ছাতকে ও জগন্নাথপুরে। সবচেয়ে কম মধ্যনগর ও শাল্লা উপজেলায়। ছাতকে ২৮.৮৩ এবং জগন্নাথপুরে ২০.৩৫ ভাগ লোকজন বিদেশে বসবাস করেন। শাল্লায় মাত্র ৯৫১ জন বা ০.৯৬ ভাগ এবং মধ্যনগরে ৫৪৮ জন বা ০.৫৫ ভাগ লোক প্রবাসে বসবাস করেন। তবে এই প্রবাসীরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রবাসে আছেন।
বসবাসের দিক দিয়ে জনসংখ্যার ঘনত্ব বাড়ছে বলে উল্লেখ করে বলা হয় জেলায় প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৭১৯জন লোক বসবাস করে। ২০১১ সালের জরিপে এই হার ছিল প্রতি বর্গকিলোতে ৬৫৯ জন। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষার হারের পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে সাধারণ শিক্ষায় ৮৮.৮৯ ভাগ, কারিগরি শিক্ষায় মাত্র ০.৩৫ ভাগ, ধর্মীয় শিক্ষায় ৭.৩৫ ভাগ এবং অন্যান্য শিক্ষায় ৩.৪১ ভাগ। কাজকর্মের পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয় জেলায় কাজের দিক দিয়ে কৃষিই এগিয়ে। কৃষিতে জেলার ৬৩.২৭ ভাগ, সেবায় ২৯.৩৭ ভাগ এবং শিল্পায়নে ৭.৩৬ ভাগ মানুষ কাজ করেন।
বৈবাহিক অবস্থার রিপোর্টে (১০ বছর ও তদুর্ধ্ব) প্রকাশ করা হয় জেলার ৩১.৪৩ ভাগ নারী অবিবাহিত, ৪৪.৩৯ ভাগ পুরুষ অবিবাহিত, ৫৭.১৯ ভাগ নারী বিবাহিত ও ৫৪.৪১ ভাগ পুরুষ বিবাহিত। এর মধ্যে ১০.৩৬ ভাগ নারী বিধবা, ০.৮৭ ভাগ নারী বিপতœীক, ০.৫২ ভাগ নারী তালাকপ্রাপ্ত, ০.৫০ ভাগ নারী দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন। ১৪-২৪ বছর বয়সী নারীরা যারা জরিপকালে কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছিলেন না, কর্মে নিয়োজিত ছিলেন না বা বৃত্তিমূলক কোনও কাজে ছিলেন না এই হার জেলায় ৪০.৯১ ভাগ। এর মধ্যে নারীদের অবস্থান ৫৭.৯০ এবং পুরুষ ২১.৯৩ ভাগ।
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাবের পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে, জেলায় ১৫ ও তদুর্ধ জনসাধারণের ব্যাংক একাউন্ট আছে ১২.৫৮ ভাগ লোকের। এর মধ্যে ৮.৮৭ ভাগ নারী এবং ১৬.৫৯ ভাগ পুরুষের ব্যাংক একাউন্ট আছে। এছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টধারীর সংখ্যা জেলায় ২৬.৪৩ ভাগ। এর মধ্যে ১৫.১৬ ভাগ নারী এবং ৩৮.৬৬ ভাগ পুরুষ মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করেন। রেমিটেন্স গ্রহণকারী জেলায় খানা ১২.০৩ ভাগ। এর মধ্যে পল্লীর ১২.৩৫ ভাগ এবং শহরে ১০.২৬ ভাগ খানা রেমিটেন্স সুবিধা ভোগ করেন।
জেলায় মোট খানা ও বাসগৃহের সংখ্যার তথ্যও উপস্থাপন করা হয়। খানার সংখ্যা ৫ লাখ ২৮ হাজার ৫৫০টি। এর মধ্যে শহরে ৮১ হাজার ৭৭১ এবং গ্রামে ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৭৭৯টি। প্রতিটি খানার আকার ৫.০৯। বাসগৃহের সংখ্যা জেলায় ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৪৩৮টি। এর মধ্যে শহরে ৬৫ হাজার ৪২৮ এবং গ্রামে ৪ লাখ ১ হাজার ১০টি। জেলায় ১০.৪৫ ভাগ মানুষ পাকা ঘরবাড়িতে, ১৪.৫৬ ভাগ মানুষ সেমিপাকা ঘরবাড়িতে এবং ৭৩.৯৬ ভাগ মানুষ কাঁচা ঘরবাড়িতে অবস্থান করে। এছাড়াও ১.০২ ভাগ মানুষ ঝুপড়িতে বসবাস করেন।
খাবার পানির পরিসংখ্যানে জানানো হয়, ৯৬.৮৭ ভাগ মানুষ গভীর/অগভীর নলকূপ, পুকুর-নদী-লেকের ১.৩৬ ভাগ, কূপ-কোয়ার পানি ০.৮৬ ভাগ, সাপ্লাইর পানি ০.৬৮ ভাগ পানি ব্যবহার করেন। এছাড়াও পয়োনিষ্কাশনের তথ্যে জানানো হয় জেলার ২৮.২২ ভাগ মানুষ ফ্লাস ঢেলে পায়খানা ব্যবহার, অনিরাপদ নিষ্কাশন ১৯.০৬ ভাগ, স্ল্যাবসহ বিট লেট্রিন ১৯.৮০ ভাগ, স্ল্যাব ছাড়া পিট ল্যান্ট্রিন ১২.৬৫ ভাগ, কাচা/খোলা বা উন্মুক্ত ১২.৬৫ ভাগ এবং খোলা জায়গায় ৩.৫৭ ভাগ লোক টয়লেট করেন। বৈদ্যুতিক সংযোগ বিষয়ে বলা হয় জেলার ৯৮.৭২ ভাগ লোক বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। তবে এখনো ১.২৮ ভাগ লোক এই সুবিধার বাইরে আছে।
রান্নার জ্বালানীর উৎসের পরিসংখ্যানে বলা হয় কাঠ, লাকড়ি ৬৫.৯৪ ভাগ, গোবর/চারকোল ১৮.৬৭ ভাগ, এলপি গ্যাস ৭.৩০ ভাগ, খড়/পাতা/ভূষি ৫.১৫ ভাগ, সাপ্লাই গ্যাস ২.৭০ ভাগ লোক ব্যবহার করেন।
তবে রিপোর্টের বিভিন্ন তথ্য প্রকাশনার সময় এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুধীজন। তারা জানিয়েছেন জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা নীতি এই পরিসংখ্যানের আলোকেই নেওয়া হয়। তাই গুরুত্বপূর্ণ এই গণনা সতর্কতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে করা উচিত।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাদাত মান্নান অভি বলেন, পরিসংখ্যান রিপোর্ট জাতীয় ও স্থানীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এই জরিপের আলোকেই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়। উপস্থাপিত কিছু বিষয় মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতার বিপরীত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উপস্থিত সুধীজনের মধ্যে অ্যাডভোকেট শামসুল আবেদিন বলেন, প্রতিবন্ধী, হিজড়া, প্রবাসীসহ একাধিক পরিসংখ্যানের তথ্য নিয়ে আমাদের প্রশ্ন আছে। রিপোর্টের চিত্রের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই।
প্রথম ডিজিটাল জনশুমারী ও গৃহগণনা ২০২২ রিপোর্ট প্রকাশনা গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামাল উদ্দিন। তিনি স্বাগত বক্তব্যে প্রথম ডিজিটাল জনশুমারী ও গৃহগণনা ২০২২ রিপোর্টের উপর বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পৌর মেয়র নাদের বখত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজন কুমার দাস, শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাদাত মান্নান অভি, বিবিএস’র যুগ্ম পরিচালক মোস্তফা আশরাফুজ্জামান। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুচিত্রা রায়, ডা. তানজিল হক, দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরের স¤পাদক পংকজ দে, অ্যাড. সামছুল আবেদীন, অ্যাড. মাহবুবুল হাছান শাহীন, সাংবাদিক শামস শামীম। আলোচনা সভা শেষে রিপোর্ট প্রকাশনা গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, প্রথম ডিজিটাল জনশুমারী ও গৃহগণনা ২০২২ রিপোর্ট চূড়ান্ত হওয়ায় খুবই ভাল লাগছে। পরিসংখ্যান তথ্য আমাদের খুবই প্রয়োজন। এটার উপর ভিত্তি করে দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা হয়। তিনি বলেন, আজ একই সাথে সারাদেশে একই সাথে প্রথম ডিজিটাল জনশুমারী ও গৃহ গণনা ২০২২ রিপোর্ট প্রকাশনা গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com