সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন- ‘ভ্যাকসিন নেই রোগী মারা গেছে’, দয়া করে মানুষের কাছে এই ভুল তথ্য কেউ দেবেন না। ভুল তথ্য দিলে মানুষ আতঙ্কিত হয়। বাংলাদেশের প্রত্যেক হাসপাতালে রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম আছে।
বৃহ¯পতিবার (২৭ জুন) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন আয়োজিত ‘রাসেলস ভাইপার : ভয় বনাম ফ্যাক্ট’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিক ভাইবোনেরা, বাংলাদেশের মেডিসিনের আজকে যারা কর্ণধার, আপনারা তাদের মুখেই শুনলেন- রাসেলস ভাইপারে আক্রান্ত হলে কী করতে হবে আর কী করা যাবে না। আপনারা এই মেসেজগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দেন। আপনারাই কিন্তু পারেন- রাসেলস ভাইপারে আতংকিত না হওয়ার বার্তাটি জনগণের কাছে পৌঁছিয়ে দিতে।
সাপে কাটা রোগীকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া অপরিহার্য উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সংসদ সদস্যদের অনেক হ্যান্ডস আছে, মেম্বার আছে, চেয়ারম্যান আছে- রোগী হাসপাতালে আনার দায়িত্ব যদি আপনারা নেন এবং দ্রুত চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে আসেন, তাহলে যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা যাবে। চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা হচ্ছে। রোগী তো যথাসময়ে আনতে হবে। সেটা তো আর চিকিৎসকরা পারবেন না। কিন্তু রোগীকে দ্রুত নিয়ে আসা হলে আমরা রোগীকে বাঁচাতে পারি।
রাসেলস ভাইপার নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবাই নিরলসভাবে কাজ করছেন উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে ডাক্তার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মী, বিশেষজ্ঞরা এমনভাবে কাজ করছেন- আমি মনে করি, দেশের মানুষের মধ্য থেকে রাসেলস ভাইপারের আতঙ্ক একদিন চলে যাবে। তাই আসুন, আমরা একসঙ্গে সচেতন হই। সচেতনতার কোনও বিকল্প নেই। সবাই একসঙ্গে সচেতন হলে, আমরা বর্তমানে যে ক্রাইসিস, সেটা থেকে উত্তীর্ণ হতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, করোনাকালে আমরা শুনেছিলাম, ঢাকার রাস্তায় মানুষের লাশ পড়ে থাকবে। চিকিৎসকদের কল্যাণে তা হয়নি। এবারও সবার চেষ্টায় এ সমস্যা থেকে আমার উত্তরণ করতে পারবো।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, বাংলাদেশে সবাই ডাক্তার। এটি একটি বড় সমস্যা। আমাদের এখানে যেকোনো রোগে মানুষ নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ওষুধ খায়। এমনকি এন্টিবায়োটিকও খায়। সাপের কামড়ে ওঝাদের কাছে না গিয়ে যেকোনো রোগে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সাপের বিষয়ে আমরা সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক বলেন, দেশে ৬৬৫ জনকে প্রতিদিন কুকুরে কামড়ায়। ডুবেও অনেক সংখ্যক মানুষ মারা যায়। রাসেলস ভাইপারে কামড়ের সংখ্যা আরও অনেক কম। এ বিষয়ে আতঙ্ক তৈরি না করে সচেতন হবে। ভয় তৈরি করা যাবে না।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. টিটো মিয়া বলেন, সাপে কাটা রোগী যদি হাসপাতালে এসে মৃত্যুবরণ করে তার দায় আমাদের। আমাদের প্রতিটি হাসপাতালে এন্টিভেনম পৌঁছানো হয়েছে। আমাদের চিকিৎসকরা এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত। তবে ওঝাসহ নানা কারণে রোগী হাসপাতালে আসতে দেরি করায় মৃত্যু বাড়ে। দেরিতে হাসপাতালে আসায় রোগীরা অন্তত ক্রিটিক্যাল অবস্থায় চলে যায়। ওই অবস্থায় তাদের ইনটেনসিভ কেয়ার সেন্টারের প্রয়োজন। হাসপাতালে এ ক্রিটিক্যাল রোগীদের মৃত্যু অনেকটার রোধ করা সম্ভব যদি ইনটেনসিভ সেবা নিশ্চিত করা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, সাপের বিরুদ্ধে বিপ্লব ঘোষণা করা হয়েছে। এটি করা যাবে না৷ সাপ ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স রক্ষা করে। সাপের বিষ ওষুধ তৈরির একটি উপাদান। রাসেল ভাইপার নিয়ে অসংখ্য মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপের একটি। অথচ বিশ্বের ১০টি বিষধর সাপের মধ্যেও এটা নেই।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, দেশের ২৭ জেলায় বহুল আলোচিত রাসেলস ভাইপার সাপ পাওয়া গেছে। এর মানে এ নয় যে, এসব এলাকার মানুষ ঘর থেকে বের হবে না। এ সাপ নিয়ে অনেক বেশি গুজব ছড়ানো হয়েছে। রাসেল ভাইপার সাপ কখনও তেড়ে এসে মানুষকে কামড়ায় না। সে বিপদের পড়লে কিংবা ঝুঁকি দেখলেই আত্মরক্ষার্থেই শুধু কামড় দেয়।
২০১৩ সালে প্রথববার সাপটির কামড়ে রোগী পাওয়া যায়। এ সাপের দংশনে ৭০ শতাংশ রোগী সুস্থ হচ্ছে। বাকি ৩০ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী দেরিতে হাসপাতালে আসা। বর্তমানে দেশে এর এন্টিভেনম রয়েছে। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর এন্টিভেনম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেশেও এ সাপের এন্টিভেনম তৈরি কাজ চলমান আছে।
সেমিনার থেকে আরও বলা হয়, সরকারি মেডিকেল হাসপাতাল, অনেক উপজেলা হাসপাতালেও সাপে কাটা রোগীর সফল চিকিৎসা হয়, তাই সাপে কাটা রোগীকে ওঝা বা কোনো কবিরাজের কাছে না নিয়ে যতদ্রুত সম্ভব সরকারি হাসপাতালে নিতে হবে। সাপ কামড় দেওয়ার ১০০ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হলে রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা কমে যায়। পাশাপাশি যারা মাঠে কৃষিকাজ করেন তাদের গামবুট পড়ে কাজ করার পরামর্শও দেওয়া হয় সেমিনার থেকে।