শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি ::
শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা উপেক্ষা ও অনিয়ম করে শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে ঘিরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও গণ্যমান্য শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা আগামী ১৩ জুন সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
গত শনিবার (৮ জুন) দুপুরে বিদ্যালয় চলাকালীন স্থানীয় অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আব্দুল মুজিব ও মো. হামিদুর রহমান, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ অনেক অভিভাবক স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এ অভিযোগ করেন।
স্থানীয় ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সুবাদে শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশনা উপেক্ষা ও অনিয়ম করে সুরমা উচ্চ বিদ্যালয়ে ও কলেজ নির্বাচনে সাধারণ অভিভাবক প্রতিনিধি (উচ্চ মাধ্যমিক) ও সাধারণ অভিভাবক প্রতিনিধি (মাধ্যমিক) স্তরে প্রত্যেক প্রার্থীর নিকট থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহকালে সরকারি বিধি মোতাবেক ১ হাজার টাকা নির্ধারণ করা থাকলে সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূত প্রত্যেক সদস্যের নিকট থেকে ৩ হাজার টাকা রশিদ ছাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে দুই প্রার্থী আব্দুল মুজিব ও মো. হামিদুর রহমানসহ কতিপয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহকালে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রদান না করার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে বিগত ২০২০-২২ ও ২০২২-২৪ সনে বিদ্যালয়ের দাতাসদস্য হিসেবে পরপর দুইবার নির্বাচিত হন আলহাজ্ব আব্দুল মমিন এবং চলতি বছর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে অভিভাবক সদস্য হিসাবে প্রার্থী হয়েছেন মো. জামিল আহমদ। তিনি ইতিপূর্বে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে প্রথমবার বিদ্যুৎসাহী সদস্য ও পরে আবারও অভিভাবক সদস্য হিসাবে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও সরকারি বিধিমালায় কোন ব্যক্তি একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিতে পরপর দুই বারের অধিক, সভাপতি, শিক্ষা প্রতিনিধি বা অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার নিয়ম না থাকলেও ২০২৪-২৫ সনে আবারও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য আলহাজ্ব আব্দুল মমিন গোপনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনরায় দাতাসদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও বিদ্যালয়ের আরো অনেক দাতা সদস্য রয়েছেন। এনিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে অভিভাবক সদস্য প্রার্থী মো. হামিদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে আমি ৩ হাজার টাকা দিয়ে মনোয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। আমাকে ভোটার তালিকা দেওয়ার কথা ছিল, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির লোকজন আমাকে ভোটার তালিকা দেন নাই। এই অল্প সময়ে আমি কার কাছে ভোট চাইবো। তাই ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় তফসিল ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।
পাথারিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা মিয়া বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম ও ম্যানেজিং কমিটির অসাধু কিছু লোকজনদের যোগসাজশে বিদ্যালয়ের মান-সম্মান ডুবছে। তারা বিদ্যালয় ও কলেজকে ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসাবে বেছে নিয়েছেন। শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য, বিদ্যালয়ের পরিচালনাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার নামে অসাধু উপায়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে তৃতীয় বারের মতো দাতা সদস্য হিসাবে একজন নির্বাচিত হয়ে বসে আছেন। এধরনের প্রহসনের নির্বাচন আমরা চাই না। অনেক অভিভাবক নির্বাচন স¤পর্কে জানেনা। গোপনে স্বল্প পরিসরে নির্বাচন করার বানচাল করছেন। তাই এলাকার মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় তফসিল ঘোষণার করে সৎ, শিক্ষিত ও যোগ্য লোককে নির্বাচিত করার সুযোগ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল মমিন জানান, আমি চার বার বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। এবারও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছি। আমাকে দুই দাতা সদস্য অনুমোদন দিয়েছেন। আগের আইনে আমি সভাপতি ঠিক আছি। বর্তমান আইনেও আমি বৈধ সভাপতি হয়েছি।
পাথারিয়া সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, বিধি মোতাবেক ম্যানেজিং কমিটির সাথে সভা করে এবং বিদ্যালয়ের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় রেজুলেশনের মাধ্যমে প্রার্থীদের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকায় মনোনয়ন ফরম বিক্রয় করেছি। ভোটার তালিকা প্রার্থীরা নিজ খরচে অফিস চলাকালীন ফটোকপি করে নেওয়ার জন্য বলেছি। এখানে কোন অনিয়ম হয়নি।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুকান্ত সাহা বলেন, পাথারিয়া সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের নির্বাচনে একের অধিক সময় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে থাকলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।