বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণ অব্যাহত থাকায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি স্থিতিশীল আছে। পাহাড়ি ঢলের তোড়ে সীমান্ত এলাকার অভ্যন্তরীণ সড়ক প্লাবিত হয়ে বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখনো সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে আছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে মাঝারি ও ভারী বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম থাকায় সুনামগঞ্জে বড়ো বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা নেই। জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতিটি উপজেলায় জরুরি মিটিং করা হয়েছে। নৌকা, আশ্রয়কেন্দ্র, শুকনো খাবার মজুদ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে নদীগুলো পানিতে টইটম্বুর থাকলেও অধিকাংশ হাওরে পানি নেই। বিভিন্ন হাওরে গরু ঘাস খেতে দেখা গেছে। তাই হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের নির্ধারিত পয়েন্ট কেটে পানি ঢোকানোর দাবি জানিয়েছেন কৃষক ও পরিবেশবিদরা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বিকেলে সুরমার পানি ৭.৫৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৭৫ মিলিমিটার। সকালে ভারী বর্ষণ হলেও দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকায় পানি স্থিতিশীল আছে। তবে ভারী বর্ষণ ও ঢল অব্যাহত থাকলে পানি বাড়বে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে নদ-নদী পানিতে টইটম্বুর থাকলেও জেলার বড়ো হাওরগুলোতে এখনো পানি কম। ফসলরক্ষা বাঁধ কেটে না দেওয়ায় এবং যত্রতত্র ফসলরক্ষা বাঁধ তৈরি করায় হাওরে পানি ঢুকতে প্রতিবন্ধকতায় পড়েছে বলে হাওর আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ জানান। এ কারণে গ্রামীণ অভ্যন্তরীণ সড়কে পাহাড়ি ঢলের চাপে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে তারা অবিলম্বে হাওরের বাঁধ কেটে পানি ঢোকানোর দাবি জানিয়েছেন।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেনরায় বলেন, প্রতিবছরই অপ্রয়োজনীয় ও অপরিকল্পিত বাঁধ তৈরি করে প্রকৃতির ক্ষতির সঙ্গে সরকারের অর্থ অপচয় হচ্ছে। এসব বাঁধের ফলে হাওরে পানি নিষ্কাশন ও মওসুমে পানি ঢোকতে সমস্যা হচ্ছে। এখন অধিকাংশ বড়ো হাওরে পানি নেই। কিন্তু নদী ভরা। তাই অবিলম্বে নির্দিষ্ট পয়েন্টে বাঁধ কেটে পানি ঢোকানো জরুরি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মামুন হাওলাদার বলেন, জেলা কমিটি উপজেলা কমিটিগুলোতে নির্দিষ্ট পয়েন্টে বাঁধ কেটে পানি ঢোকানোর নির্দেশনা দিয়েছে। বিভিন্ন উপজেলাতেই পানি ঢোকানো হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, জেলা ও উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সভা করা হয়েছে। নৌকা, আশ্রয় কেন্দ্র ও শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে ত্রাণ ও অন্যান্য উপকরণের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখা হয়েছে। তবে এখনো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি বলে জানান তিনি।