বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জের হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ১৫৯টি ক্লোজারের (বড় ভাঙ্গা) জিও টেক্স পলি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে দুষ্কৃতকারীরা। হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের বরাদ্দ থেকে বাঁধের সুরক্ষার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে এই এই জিও টেক্স লাগানো হয়েছিল। এখন হাওরের ফসল তোলার পর পানি বাড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট থেকে মূল্যবান জিও টেক্স তুলে নিচ্ছে একদল দুষ্কৃতকারী। জিও টেক্স থাকলে বাঁধগুলো আগামীর জন্য আরো সুরক্ষিত হতো বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ১৫৯টি ক্লোজার (বড় ভাঙ্গা) রয়েছে। আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে এই পয়েন্টগুলো ঝুঁকিপূর্ণ থাকে। এই পয়েন্ট দিয়েই পানি ঢুকে হাওরের ফসল তলিয়ে যায়। তাই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) ঝুঁকিপূর্ণ এসব পয়েন্টে জিও টেক্স দিয়ে বাঁধকে সুরক্ষিত রাখে। এখন ফসল তোলার পর প্রতিটি হাওরের ক্লোজারের মূল্যবান এই পলি তুলে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় কিছু লোক। এগুলো থাকলে বাঁধ আগামীর জন্য সুরক্ষিত থাকতো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছর ১৫৯টি ক্লোজারে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার স্কয়ার মিটার জিও টেক্স পলি লাগানো হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা।
প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসী জানান, প্রত্যেক হাওরের ক্লোজার থেকেই জিও তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোথাও পিআইসির লোকজন, কোথাওবা অন্যরা। এমনকি বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও তুলে নিয়ে গিয়ে নিজের ব্যক্তিগত কাজে লাগাচ্ছেন। গত ৩১ মে শুক্রবার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার হালির হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ২৩ নম্বর পিআইসির দাতরাঙ্গী খালের ক্লোজারের জিও টেক্স তুলে নিয়ে গেছেন ফতেপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুল হেকিম মেম্বার। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মতিন মিয়া বলেন, গতকাল মেম্বার সাব হাওরের বান্দের জিও পলি তুলে নিয়ে গেছেন। স্থানীয়রা বাধা দিলে তিনি হুমকি ধমকি দেন। অনেক মানুষই এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। এ হাওরের অন্যান্য ক্লোজারের জিও টেক্সও তিনি তুলে নিয়ে নিজের কাজে লাগাচ্ছেন। এগুলো থাকলে বাঁধ আগামীতে আরো সুরক্ষিত থাকতো বলে জানান তিনি।
ইউপি সদস্য আব্দুল হেকিম বলেন, কারা নিছে আমি জানিনা। হাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি আমাকে বলেছেন রাতে জিও ব্যাগ চুরি হয়েছে। আমি শুক্রবার সকালে গিয়ে দেখি অর্ধেক নিয়ে গেছে। অর্ধেক অবশিষ্ট আছে। এই অর্ধেক অংশ আমি স্থানীয় দুই যুবককে দিয়ে পাশের একটি বাড়িতে রেখেছি।
এদিকে দিরাই উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের ২৫ নম্বর প্রকল্পসহ এই হাওরের তিনটি ক্লোজার ও অন্যান্য হাওরের বাঁধের ক্লোজারের জিও টেক্সও চুরি হয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ভরাউট গ্রামের আব্দুল করিম বলেন, আমি কয়েককদিন আগে ধল বাজারে যাওয়ার পথে দেখি ক্লোজারের জিও ব্যাগ নাই। খোঁজ নিয়ে জানলাম স্থানীয় কিছু লোক চুরি করে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, এগুলো মাটির নিচে ব্যবহার হলে বাঁধ সুরক্ষিত হতো এবং চুরিও ঠেকানো যেতো।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, এবার প্রায় সাড়ে ১২ হাজার স্কয়ার মিটার জিও ব্যাগ লাগানো হয়েছে। ফসল তোলার পর এখন হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। শুনেছি কিছু লোক জিও ব্যাগগুলো চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।