শহীদনূর আহমেদ ::
অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন বীরপ্রতীক খেতাব। শিক্ষকতার মহান পেশার পাশাপাশি ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। একবার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের আহ্বায়কও তিনি। তবে সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ছেলের বয়সী প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপরীতে হতাশাজনক ভোট পেয়েছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। মোটরসাইকেল প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ২ হাজার ৬৯০টি। উল্লেখযোগ্য ভোট না পাওয়ায় জামানত বাজেয়াপ্ত হতে যাচ্ছে এই প্রবীণ রাজনীতিবিদের।
জানাযায়, দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ৫ জন প্রার্থীর ৩ জনই স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলের রাজনীতি করেন। বলা হচ্ছে, তার এই পরাজয়ের পেছনে রয়েছে গ্রুপিং রাজনীতির কূট চাল রয়েছে। উপজেলায় যে নেতার আশীর্বাদে দলের একাংশের নেতৃত্ব দিতেন বীর প্রতীক ইদ্রিস আলী, এবারের নির্বাচনে সেই নেতা মুহিবুর রহমান মানিক এমপি এবং নিজের গ্রুপের সমর্থন পাননি তিনি। প্রাপ্ত ভোটগুলো এসেছে ব্যক্তিগত ইমেজ আর আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে। এর বিপরীতে এমপি সমর্থকরা নেতার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে বেশিরভাগই ছিলেন তুলনামূলক ভাল অবস্থানে থাকা দেওয়ান তানভীর আশরাফী চৌধুরী বাবুর সঙ্গে। আবার এমপি সমর্থক বাবু-বিরোধীদের একাংশের তলে তলে সমর্থন ছিল বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আরিফুল ইসলাম জুয়েলের প্রতি। কেউ কেউ ছিলেন এমপি গ্রুপের অপর প্রার্থী নূরুল আমিনের সঙ্গে।
নির্বাচনের শুরু থেকেই অনেকেই মনে করেছিলেন সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থান আর মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশের জন্য অবদান রাখার বিষয়টি মাথায় রেখে অন্যান্যবারের মত এমপি মানিকের সমর্থন পাবেন বীরপ্রতীক ইদ্রিস আলী। ছাতক-দোয়ারার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমপি মানিক সমর্থন বরাবরই নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণী নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। নিজের আস্থাভাজন অপর প্রার্থী বাবুর প্রতি নাখোশ থাকার যে গুঞ্জন ভোটের মাঠে ছিল সেই কারণে হয়তো ইদ্রিস আলীর পক্ষে মুখ খুলেননি এমপি। কারণ নিজের সমর্থকদের একাংশ আগে থেকেই বাবুর নির্বাচনে সক্রিয়। বাবুবিরোধীদের ইদ্রিস আলীর পক্ষে যেতে উৎসাহ দিলে পরোক্ষভাবে বাবুরই লাভ। কারণ মাঠে ইদ্রিস আলীর যে জনপ্রিয়তা ছিল, সেখান থেকে সমর্থন দিয়ে তুলে আনা কঠিন ছিল। তাই সাপ মারা আর লাঠি না ভাঙার যে রাজনৈতিক কূটকৌশল চলেছে দোয়ারাবাজারে। শেষ বয়সে এসে সেই কূট চালের বলি হয়েছন প্রবীণ রাজনৈতিক ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক এমনটাই মনে করছেন সচেতন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। এদিকে বীরপ্রতীক ইদ্রিস আলীর এমন পরাজয়ে জেলার আওয়ামী রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। তৃণমূল নেতাকর্মীরা এমন বিষয়টি সহজে মেনে নিতে পারেননি।
তবে নিজের পরাজয়ের ব্যাপারে দল ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সমর্থন না পাওয়ার ব্যাপারে দোষ দিতে রাজি না বীরপ্রতীক ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, যারা আমাকে পছন্দ করে তারাই ভোট দিয়েছে। যারা পছন্দ করে নাই তারা ভোট দেয়নি। আর দলের নির্দেশনা ছিল এমপিকে নিরপেক্ষ থাকার। তাই হয়তো তিনি সরাসরি সমর্থন দেননি। এটিকে আলাদা করে দেখার তেমন কিছু আছে বলে আমি মনে করিনা।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন বলেন, জনগন যাকে পছন্দ করেছেন তাকেই নির্বাচিত করেছেন। অনেকেই আশা করেছিলেন ভোটাররা হয়তো মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি একজন মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ রাজনীতিবিদকে বেছে নিবেন। কিন্তু এখানে সাধারণ মানুষের রায় মেনে নিতে হবে। যিনি জয়ী হয়েছেন তিনিও আওয়ামী লীগের একজন নেতা। তার বিজয়ে দলের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।