সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যাকা-ের পর আলোচনায় তারই ঘনিষ্ঠ বন্ধু আখতারুজ্জামান শাহীন। পুলিশ এরইমধ্যে জানতে পেরেছে, আনার হত্যার পেছনে হাত রয়েছে শাহীনের। তাকে এই হত্যাকা-ের মূলহোতাও বলা হচ্ছে।
শাহীনের বাংলোতে গভীর রাতে চোরাচালানের লেনদেন হতো নিয়মিত। পাচার হতো সোনা ও হীরার চালান। তার বাংলোতে রাজনীতিবিদ, আমলা ও পুলিশের কিছু কর্মকর্তার অবাধ যাতায়াতের তথ্যও পেয়েছে পুলিশ। মেধাবী ছাত্র শাহীন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং করে চাকরি করেন কিছুদিন। তবে চোরাচালানে তাঁর যাত্রা শুরু হয় ডিবি লটারিতে যুক্তরাষ্ট্র চলে যাওয়ার পরই।
পুলিশ সূত্র জানায়, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামের আসাদুজ্জামান কাটুর পাঁচ সন্তানের মধ্যে চতুর্থ আখতারুজ্জামান শাহীন। শাহীন ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন। ১৯৮৫ সালে কোটচাঁদপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। এরপর কেএমএইচ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এলাকায় লেখাপড়া শেষ করে চিটাগাং মেরিন ইঞ্জিনিয়ারে ভর্তি হন। সেখানে লেখাপড়া শেষ করে চাকরি নেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জাহাজের ক্যাপ্টেন হিসেবে। বছর দুয়েক চাকরিও করেন। শিপের চাকরি করার সময় ১৯৯৫ সালে ডিভি লটারিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর সেখানেও শিপে চাকরি করেন। অর্থের নেশায় চোরাকারবারিতে জড়িয়ে পড়েন। চোরাকারবারিদের সঙ্গে আঁতাত হলে চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। গড়ে তোলেন একটি বিশাল চোরাচালান চক্র। আবার আগে থেকেই সখ্য ছিল আনারসহ অন্তত পাঁচজন শীর্ষ ব্যবসায়ীর সঙ্গে। চোরাচালানের টাকায় ক্রয় করেন এলাঙ্গী গ্রামের বাংলোর জায়গা। এ ছাড়া ঢাকার গুলিস্তান ও বসুন্ধরায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বার ব্যবসা শুরু করেন। সেখানে বসত মদের আসর। কোটচাঁদপুর থেকে ভারত সীমান্ত বেশি দূরে না হওয়ায় মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এরপর ধীরে ধীরে সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন শাহীন। গড়ে তোলেন টাকার পাহাড়।
যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও বাংলাদেশে তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। কোটচাঁদপুরে তার ছিল ব্যাপক প্রভাব। কাউকে শত্রু মনে করলে তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হতো। এমনকি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিরোধীদলীয়দের বিভিন্ন মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দিতেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলে প্রায়ই শাহীন থাকতেন বাংলোতে। তিনি আসার পর মাঝেমধ্যে গাড়িতে করে আসা-যাওয়া করত অনেকেই। বাংলোতে রয়েছে নিজস্ব বাবুর্চি। রান্না করে চলত খাওয়াদাওয়া ও ভূরিভোজ। রাতে মাঝেমধ্যে শোনা যেত বাদ্যবাজনা ও গানবাজনা।