সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
যুক্তরাজ্যের বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার এখনও সময় বাকি আছে অন্তত ছয় মাস। কিন্তু তার আগেই আগাম জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। গত বুধবার বিকেলে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট থেকে আগামী ৪ জুলাই জাতীয় নির্বাচনের এই ঘোষণা দেন তিনি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগেই হঠাৎ কেন আগাম নির্বাচন চাইছেন ঋষি সুনাক? এমন প্রশ্ন এখন সবার মনে।
অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু পদক্ষেপ নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় থাকা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী সুনাক আসলে কী চাইছেন, কেনইবা নির্বাচনের জন্য এ সময় বেছে নিলেন – যুক্তরাজ্যের আগাম নির্বাচন নিয়ে এমনই প্রশ্ন খোঁজার চেষ্টা করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি ও দ্যা গার্ডিয়ান।
বিবিসি বলছে সুনাকের এমন ঘোষণা আকস্মিক নয়। সকাল থেকেই আগাম নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হতে পারে এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। এছাড়া কনজারভেটিভ পার্টির জ্যেষ্ঠ এক নেতার সঙ্গে আলোচনাতেই বুঝা গেছে যে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পরই নির্বাচনের প্রেক্ষাপট দাঁড় করানো হয়েছে। যার ফলাফল পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে রাজার অনুমতি পাওয়ার পর বুধবার ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে দেওয়া নির্বাচনের ঘোষণায় সুনাক বলেন, ৪ জুলাই হবে ভোট।
এর আগে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যদের ডাকা হয়। সেখানে আগাম নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী সুনাক।
বিবিসি বলছে, ¯পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছিল যে, অনেকটা চাপে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী সুনাক। আগাম নির্বাচন দ্রুত আয়োজনের বিষয়ে যাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে চাপ দিচ্ছিলেন, তাঁদের মধ্যে উপপ্রধানমন্ত্রী অলিভার ডওডেন নিজেও ছিলেন।
আগাম নির্বাচনের পক্ষে থাকা ব্যক্তিদের যুক্তি, পরিস্থিতি এখনকার চেয়ে আরও ভালো না-ও হতে পারে। তাই যত বিলম্ব হবে, কনজারভেটিভ সরকারের ওপর থেকে ভোটারদের আস্থা কমতে পারে। ভোটাররা মন বদলাতে পারেন। ক্ষমতাসীনদের এতে ঝুঁকি বাড়বে। তাই নির্বাচন নিয়ে মত, হয় এখনই আয়োজন করুন, নয়তো আরও খারাপ পরিস্থিতির অপেক্ষায় থাকুন। আর তাই স্থানীয় নির্বাচনে ভরাডুবির পর বর্তমান সময়কেই ভোটের জন্য উপযুক্ত ভাবছেন সুনাক, কেননা সামনের পরিস্থিতি তার হাতে নাও থাকতে পারে।
দ্যা গার্ডিয়ান বলছে, কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রধানমন্ত্রী সুনাক বলে আসছেন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হওয়ার প্রমাণ রয়েছে তার কাছে। এখন তিনি যেসব বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, তাতে জনগণের সায় আছে কিনা, তা যাচাই করে নিতে চাইছেন তিনি।
আরেকটি বিষয় আছে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে। বেশ কিছু আশ্রয়প্রার্থীকে রুয়ান্ডায় পাঠাতে চায় যুক্তরাজ্য সরকার। এই প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। তবে শিগগিরই তা শুরু হতে পারে। এমনকি নির্বাচনী প্রচারের ডামাডোলেও পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা হতে পারে।
তবে বলা হচ্ছে, ভোটের লড়াইয়ে এই পরিকল্পনা প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে। তাই হয়তো নির্বাচনের ডামাডোলে এটা নিয়ে নতুন করে ভাববে সরকার।
যুক্তরাজ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার আগে কয়েকদিন তা মূলতবি রাখা হয়। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের ঘোষণা অনুযায়ী, ২৪ মে শুক্রবার পার্লামেন্ট মুলতবি হবে এবং ভেঙে দেওয়া হবে ৩০ মে বৃহ¯পতিবার।
পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর পদ হারাবেন সংসদ সদস্যরা। যারা আবার নির্বাচন করতে চান, তারা নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় ফিরে গিয়ে প্রচারে নামবেন। তবে তারা এমপি হিসেবে নন, সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে থাকবেন।
নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মন্ত্রীরা আগের মতোই দায়িত্ব পালন করে যাবেন। এ সময় সরকারি কর্মকা- সীমিত থাকবে। রাজনৈতিক উদ্দেশে প্রচারে কোনোভাবেই রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করা যাবে না।