স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জে খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম চলছে। গত মঙ্গলবারও সরকারি বন্ধের দিনে কৃষকরা সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গুদামে এসে ধান দিতে দেখা গেছে। তখন সরেজমিন বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের কাছে কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা মাঠে গিয়ে ধানের ময়েশ্চার (আর্দ্রতা) পরীক্ষা করে পাঠিয়েছে কি-না জানতে চাইলে তারা তা অস্বীকার করেন। কৃষি বিভাগের কেউ তাদের কাছে যায়নি বলেও জানান। তাই এখানে এসে তাদেরকে ধান শুকিয়ে তারপর গুদামজাত করতে হচ্ছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে গেলে এই দুর্ভোগ হতোনা বলে জানান কৃষকরা।
সুনামগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১১ উপজেলা থেকে সরকার ২৯ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ৯ হাজার ৬৮৪ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ৯ হাজার ৯৫৪ মেট্রিক টন আতপ চালও জেলা থেকে সংগ্রহ করা হবে। আগামী ৩১ আগস্ট বোরো ধান চাল সংগ্রহ অভিযান শেষ হবে। খাদ্য বিভাগের মতে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৭০০ টন ধান, ২৩০০ টন সিদ্ধ চাল ও ৮০টন আতপ চাল সংগ্রহ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১৬৩ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আছেন যারা বিভিন্ন ইউনিয়নের ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করেন। তারা মাঠে সরাসরি কাজ করার কথা। কিন্তু তাদের অনেককেই চিনেননা কৃষকরা। ফলে তারা মওসুমে কাক্সিক্ষত সেবা পাননা। সূত্র আরো জানিয়েছে, ধান সংগ্রহের মওসুমে তালিকাভুক্ত কৃষকদের ধানের গুণাগুণ পরীক্ষার জন্য সরকার কৃষি বিভাগকে শতাধিক যন্ত্র (ময়েশ্চার মিটার) দিয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ৭১টি যন্ত্র সচল আছে। কিছু যন্ত্র অচল আছে। আরো ৫০টি যন্ত্রের জন্য জেলা প্রশাসক কৃষি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে লিখেছেন। কিন্তু অভিযোগ আছে দায়িত্বপ্রাপ্তরা এই যন্ত্র দিয়ে কৃষকের ধান পরীক্ষা করেন না। কৃষকরাও এ বিষয়ে কিছু জানেননা। তাই ধান দিতে গুদামে এসে দুর্ভোগে পড়ছেন তারা।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মল্লিকপুর খাদ্য গুদামে ধান দিতে আসা ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের কৃষক মাফিজ আলীকে গুদামের সামনে ত্রিপালে ধান শুকাতে দেখা যায়। তিনি বলেন, আমি কোন কৃষি অফিসারকে চিনিনা। তারা কেউ ধান পরীক্ষার জন্য আমাদের কাছে যায়নি। আমরাও বিষয়টি জানিনা।
একই কথা জানালেন, অক্ষয়নগরের কৃষক লিয়াকত আলী ও গৌরারং ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক বুরহান উদ্দিন। এই দুই কৃষকও জানালেন কৃষি অফিসের লোকজনের কেউ যন্ত্র নিয়ে ধান পরীক্ষার জন্য আমাদের কাছে যায়নি। আমরা কেউ তাদের চিনিওনা। এখানে ধান দিতে এসে পরীক্ষায় দেখা গেছে ধান সরকারি নিয়মানুযায়ী শুকনো নয়। তাই আবারও শুকাতে হয়েছে। এতে আমাদের পরিশ্রম হয়েছে। যদি বাড়িতে পরীক্ষা করার সুযোগ থাকতো তাহলে এই দুর্ভোগ হতোনা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, মাঠপর্যায়ে ২৬৭ জন কৃষি কর্মকর্তার মধ্যে আমাদের আছে মাত্র ১৬৩ জন উপ-সহকারী কৃষি অফিসার। ধানের গুণাগুণ পরীক্ষার জন্য সরকার আমাদেরকে যে যন্ত্র দিয়েছে তার মধ্যে ৭১টি যন্ত্র সচল আছে। গুদামে ধান দিতে তালিকাভুক্ত কৃষকদের ধান পরীক্ষা করার কথা। তাই যারা তালিকাভুক্ত হয়েছেন তার মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অবশ্যই তারা পরীক্ষা করে দিতে বাধ্য। কোন অফিসার সেটা না করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। তবে কৃষকরা এ বিষয়ে অবগত না থাকায় আমরা নানাভাবে মতবিনিময় ও প্রচারের মাধ্যমে তাদের সচেতন করছি।