গত ২২ মে ২০২৪ দৈনিক কালের কণ্ঠের একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, ‘লঘুদণ্ডে প্রশাসনে বাড়ছে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড’। প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও তিরস্কার ও বেতন হ্রাসের শাস্তি দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এসব কর্মকর্তার বেশির ভাগ নবীন হওয়ায় কম শাস্তির পাশাপাশি বড় দায় থেকেও অনেকে অব্যাহতি পাচ্ছেন। কিন্তু অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রশাসনে বেড়েই চলেছে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড।’ প্রতিবেদনের এইটুকু বয়ান প্রতিপন্ন করছে যে, ‘লঘুদণ্ডে প্রশাসনে বাড়ছে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড’ এই বাক্যবন্ধের আড়ালে লুকিয়ে আছে ‘প্রশাসনে গুরুপাপের ভার বাড়ছে’ বাক্যবন্ধটি।
শাস্তি নাগরিকের উপর রাষ্ট্র আরোপিত প্রতিকার। অপরাধ নিরোধের পদ্ধতি হিসেবে শাস্তিকে আইনের বিধান দ্বারা রাষ্ট্র বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে নাগরিকের উপর প্রয়োগ করে এবং যখন শাস্তি প্রদানে নিরত বিচার প্রক্রিয়ায় শাস্তিপ্রয়োগে লঘুদোষ গুরুদ- কিংবা গুরুদোষে লঘুদণ্ড প্রদানের সংস্কৃতি কার্যকর হয় তখন রাষ্ট্র ও সমাজের ভেতর অপরাধসহ অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়ম বৃদ্ধি পায়, যেমন প্রশাসনে বৃদ্ধি পায় ‘বিতর্কিত কর্মকাণ্ড’। এই ‘বিতর্কিত কর্মকাণ্ড’ আসলে বিতর্কিত কীছু নয়, এগুলো অপরাধেরই নামান্তর, কিন্তু ‘বিতর্কিত’ বলা হচ্ছে ‘অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত’ হয়েছে যাদের বিরুদ্ধে তাদের বিরুদ্ধে যাতে কোনও কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না হয় তার জন্য। কিন্তু বিদগ্ধজন মনে করেন, চালুনি তো সুচকে তার পিছনে ছিদ্রের জন্য দোষারোপ করতে পারে না, তাই এরকম বিতর্কিত ব্যবস্থা অর্থাৎ অপরাধীর প্রতি অনুকম্পা প্রকাশ। সৎ শাসন চাইলে এইরূপ অনুকম্পা প্রকাশের সংস্কৃতির চর্চা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে নির্দ্বিধায় পরিহার করতে হবে। এছাড়া আইন ও প্রশাসনের নিয়ম-কানুন বাস্তবতার সাপেক্ষে বদলানোসহ রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ব্যবস্থায় অবশ্যই সৎ ও মেধাবী লোকনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।