1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৪:১৩ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

অ্যাসাইলাম আবেদনে অপব্যবহারের কারণেই ‘ফাস্ট ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তি’? :

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪

মাহমুদুর রহমান তারেক
গত কয়েক দিন ধরেই যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশীদের আলোচনার বিষয়বস্তু ইউকে-বাংলাদেশ ‘ফাস্ট ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তি’। রিটার্ন চুক্তির আওতায় স্টুডেন্ট, ভিজিট, ওয়ার্কারসহ নানা ভিসায় এসে অ্যাসাইলাম আবেদন প্রত্যাখ্যানকারীদের নিজ দেশে পাঠাবে যুক্তরাজ্য। যা সংখ্যায় প্রায় ১১ হাজার। তবে চুক্তিতে আবেদন প্রত্যাখ্যানকারী না দীর্ঘদিন ধরে যারা প্রত্যাখ্যান হয়ে অবৈধভাবে বসবাস করছিলেন তাদের ফেরত পাঠানো হবে, অনেকের মতো আমারও এ বিষয়ে একটা ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।
আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত সিলেট বিভাগের এক রাজনীতিবিদের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল কিছুদিন আগে। নানা সময়ে নির্যাতিত এই নেতা জেল খাটাসহ অনেক মামলার আসামি হয়েছেন। পড়েছেন আর্থিক ক্ষতির মুখে। পরে পরিবারের সদস্যদের চাপে যুক্তরাজ্যে এসে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। রাজনৈতিক দলিলাদি প্রমাণে বড় ফাইল জমা দিয়েও তাঁর আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যান করে হোম অফিস। আপিলের সিদ্ধান্তের আশায় দিন কাটছে তাঁর। তিনি জানান, তাঁর নিজ এলাকার আরেকজন রাজনীতি না করেই আশ্রয় পেয়েছেন।
এ রকম আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যানের ঘটনা যুক্তরাজ্যে শত শত। যাদের আশ্রয় পাওয়ার কথা তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান হচ্ছে। যারা বাংলাদেশে আরাম, আয়েশে জীবন কাটিয়ে নানা ভিসায় এসে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন তাদের আবেদন গ্রহণ করার বিষয়টিও উঠে আসছে।
বৃটিশ গণমাধ্যমের তথ্যমতে, গত তিন বছরে প্রায় তিন হাজার দুইশত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আশ্রয়ের আবেদন করেছেন, এর মধ্যে বাংলাদেশেরই প্রায় ১ হাজার ৬০০ আবেদনকারী।
হোম অফিসে সূত্রমতে, আশ্রয় দাবিদারদের মধ্যে পাকিস্তান রয়েছে প্রথমে। এরপরে বাংলাদেশ। বাংলাদেশীদের ১১,০০০টি রাজনৈতিক আশ্রয়ের মামলা রয়েছে।
সেদিন একজন সলিসিটরের কাছে আমার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে গিয়েছিলাম। তিনি কথা প্রসঙ্গে বলেন, আমরাও চাই বাংলাদেশ থেকে স্বপ্নের দেশ যুক্তরাজ্যে প্রচুর সংখ্যক মানুষ আসুক। তাদের কর্মসংস্থান হোক। পরিবারসহ নিয়ে আসারও সুযোগ দিয়েছে দেশটি। কিন্তু আমরা বাঙালিরা নিজেরাই নষ্ট করে দিচ্ছি এই সুযোগ। চুক্তির বিয়ে ও বিয়ে নিয়ে প্রতারণার কারণে স্টুডেন্ট ভিসায় ডিপেন্ডেন্ট আনা বন্ধ হয়ে গেছে। দক্ষকর্মী না আসায় কেয়ার ভিসায়ও আসা প্রায় বন্ধ। অ্যাসাইলাম আবেদনকারীদের বড় অংশ নিয়ম ভঙ্গ করে লুকিয়ে কাজ করে, অর্থনৈতিক লেনদেন করে, যা অনেক সময় হোম অফিসের নজরে পড়ে। অ্যাসাইলাম আবেদনের অপব্যবহারের কারণে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ফাস্ট ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তি করেছে যুক্তরাজ্য। এটা আসলে আমাদের জন্য বিশেষ বার্তা।
এক সময় আমি পেশাদার সংবাদিক ছিলাম। যুক্তরাজ্যে বেশি দিন হয়নি বসবাস করছি। কিন্তু বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ রাখার চেষ্টা করি। আমি ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, যারা পড়াশোনার জন্য এসেছিলেন প্রথমে একটু কষ্ট হলেও তারা পরবর্তীতে ভালো অবস্থানে আছেন। সরকারের কাছ থেকে কোন আর্থিক সুবিধা না পেলেও অধিকাংশই গড়ে দুই হাজার পাউন্ড আয় করছেন। অনেকে নিজ যোগ্যতায় বিভিন্ন কো¤পানি থেকে ওয়ার্ক পারমিটও পেয়েছেন। কেউ কেউ নিজ টাকায় বিভিন্ন সেক্টরে ভিসা সুইচও করেছেন। আবারও কেউ টাকা পয়সা জমিয়ে ইউরোপে পাড়ি দিয়েছেন। ব্রিটিশ কন্যা বিয়ে করে অনেকে সংসারও করছেন। বিপদে পড়েছেন যারা নামমাত্র স্টুডেন্ট ভিসায় এসে ‘না পারছেন কাজ যোগাড় করতে, না পারছেন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে।’ তারাই বাধ্য হয়ে অ্যাসাইলাম আবেদন করছেন। এমনও আছেন, ইউকে’র এয়ারপোর্টে নেমে ইমিগ্রেশনের প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাসাইলামের আবেদন করেছেন।
অন্যদিকে কেয়ার ভিসায় একই অবস্থা। দালালদের ভরসায় ভুঁইফোড় কো¤পানির ভিসায় এসে কাজ না পাবার ঘটনা শত শত। পূর্ব অভিজ্ঞতা ও ইংরেজিতে কোন দুর্বলতা না থাকলেও নানা অজুহাতে কো¤পানি কাজ দেয় নি এমন অভিযোগের শেষ নেই। বাংলাদেশ থেকে কেয়ার ভিসায় আসা দ¤পতি হিথ্রো এয়ারপোর্টে এসে দেখেন কো¤পানীর লাইসেন্সস বাতিল, এরকম ঘটনাও আমরা মিডিয়াতে দেখেছি। কেয়ার ভিসায় আসা লোকজনের হাতে দালালদের মারধরের ঘটনাও আমাদের কানে আসে। কাজ না পাওয়ার সব চেয়ে বড় কারণ হল ভাষাগত সমস্যা। ইংরেজিতে দক্ষ না হওয়ায় অনেকের কাজ চলে গেছে।
তবে এর বিপরীত ঘটনাও আছে। কেয়ার ভিসায় এসে পরিচিত অনেকে পুরো সপ্তাহ কাজ পাচ্ছেন। মাস শেষে আয় অনেকের ভালো। অল্প সময়ে এসে আমার পরিচিত একজন পদোন্নতিও পেয়েছেন।
আমার এক আত্মীয় দীর্ঘদিন ধরেই কেয়ার হোমে কাজ করেন। তিনি বলেন, এই সেক্টরটা অনেক স্পর্শকাতর। ভাষাগত দক্ষতা ও পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকা খুব জরুরি। আমাদের এখানে ভাষাগত সমস্যার কারণে অনেকেরই জব চলে গেছে।
তবে অনেকের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত মতামত নাও মিলতে পারে। ফাস্ট ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তি’তে আগামীতে বন্দি বিনিময়ের মতো কিছু হতে পারে। বাংলাদেশে যাদের নামে অসংখ্য মামলা ও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তাদের ফেরত পাঠানোর দাবি করতে পারে বাংলাদেশ।
যুক্তরাজ্যের পরিচিত সলিসিটর মাহবুবুর রহমান একটি গণমাধ্যমকে জানান, এর আগেও আলবেনিয়ার সঙ্গে একই চুক্তি করেছিল ইউকে। সেই চুক্তির আওতায় প্রায় ২৬ হাজার মানুষকে দেশটিতে পাঠিয়ে দিয়েছে যুক্তরাজ্য। যারা প্রকৃত ও সঠিকভাবে অ্যাসাইলাম আবেদন করে তাদেরটা গ্রহণ হয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা হল অনেক জেনুইন লোকজন অ্যাসাইলাম আবেদন সঠিকভাবে না করায় তাদেরটা বাতিল হয়ে যায়। অনেক হাই প্রোফাইল রাজনীতিক রয়েছেন যাদের আবেদন বাতিল হয়েছে, এই চুক্তির কারণে প্রকৃত রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীরা বিপাকে পড়ছেন। একজনকে যখন রাস্তায় হোক, বাসায় হোক, কিংবা রেস্টুরেন্টে আটক করা হবে, তাদের কোন ইন্টারভিউ বা কোন সুযোগ দেয়া হবে না। দূতাবাসের যোগাযোগ করে ফেরত পাঠানো হবে। যদি এরকমভাবে দীর্ঘদিন বসবাস করার পরও ফেরত পাঠানো হয়, তাহলে তাঁরা মানসিক সমস্যা পড়বেন, বাংলাদেশেও রেমিটেন্স পাঠানো কমবে।
লেখক : যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com