সোমবার (১৩ মে ২০২৪) দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি উদ্ধৃত সংবাদপ্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “সীমান্তে বসানো হচ্ছে ৭০০ কোটি টাকার যন্ত্র : অবৈধ পণ্য আসলেই পাওয়া যাবে সংকেত”। এবংবিধ সংবাদ শুনতে ভালোই লাগে এবং মনে হয় সংশ্লিষ্ট সমস্যার সার্বিক সমাধান হয়েই যাবে এবং মন সত্যিকার অর্থেই আশ্বস্ততায় আত্মসমর্পণ করতে পছন্দ করে কিন্তু আমাদের দেশের সমাজসাংস্থিতিক পরিস্থিতি এমন যে, এখানে পরিণামে প্রতিনিয়ত সে আশ্বস্ততাকে হত্যা করে অনিবার্য ব্যর্থতা। বাংলাদেশের সার্বিক সমাজসাংস্থিতিক পরিসরে সংঘটিত এমন অনেক উপকারী কার্যক্রমের উদাহরণ দেওয়া সম্ভব, যেগুলো শেষ পর্যন্ত কোনও
উপকারেই লাগে নি বা আসে নি, বরং শ্রেণি বিশেষের বিশেষরকম অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রমের সফলতার গুণে দেশের কিংবা দেশের জনগণের নয় বরং বিশেষ সেই দুর্নীতিবাজ শ্রেণির কায়েমি স্বার্থ উদ্ধারের হাতিয়ারে পর্যবসিত হয়। উদাহরণ স্বরূপ হাওরাঞ্চলে কম্বাইন হারভেস্টর বিকল ও গায়েব হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটি এখানে স্মরণ করা যেতে পারে। কম্বাইন হারভেস্টর দ্বারা হাওরাঞ্চলে যে-উপকার পাওয়া যেতে পারতো সেটা এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজরা পেতে দেয় নি, প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে তারা তাদের কাজ সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে এবং প্রকারান্তরে প্রশাসনকে ঠুঁটোজগন্নাথে পরিণত করেছে।
সীমান্তে ও বিমানবন্দরে চোরাচালান ঠেকানো অবশ্যই দরকার। সেজন্য অবৈধ পণ্য শনাক্তকরণ একটি অপরিহার্য বিষয়। অবৈধ পণ্য শনাক্ত করতে সরকার সীমান্তে ৭০০ কোটি টাকার উন্নতমানের যন্ত্রপাতি বসাতে বদ্ধপরিকর। এতে অবৈধ পণ্য আসলেই সংকেত পাওয়া যাবে। আমরা মনে করি, দেশে অবৈধ পণ্য প্রবেশ ঠেকাতে এই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ সত্যিকার অর্থেই একটি ভালো পদক্ষেপ, যদি অন্তর্ঘাত ঠেকিয়ে সেটাকে কার্যকর করে তোলা যায়। কিন্তু বিদগ্ধ মহলের ধারণা, দেশের জন্য উপকারী এই যন্ত্রপাতিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করার কাজে অন্তর্ঘাতকারীরা সক্রিয় হয়ে সমগ্র ব্যবস্থাটিকেই অকার্যকর করে তোলবে। ফলে বিষয়টা দাঁড়াবে বেড়ায় ধান খাওয়ার মতো কিংবা কানার হাতে কুড়াল দেওয়ার মতো এবং যথারীতি দেশের ৭০০ কোটি টাকা জলে যাবে, কাজের কাজ কীছুই হবে না। তারপরও আমরা মনে করি এবং আশা রাখি আমাদের সরকার অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রমকে প্রতিহত করে সফলতা অর্জন করবে।