শিরোনামটা ‘অর্ধেক যন্ত্রই বিকল, শতাধিক গায়েব’। বিকল ও গায়েব হয়েছে একধরনের যন্ত্র, যাকে বলে ‘কম্বাইন হার্ভেস্টর’, অর্থাৎ ফসল কাটার যন্ত্র। সংবাদবিবরণীতে বলা হয়েছে, “হাওরে কৃষকদের কম্বাইন হার্ভেস্টর বিতরণের নামে ভয়াবহ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে কৃষি বিভাগ ও সরবরাহকৃত কোম্পানির লোকজন। পার্টস নষ্ট হলে দুই বছরের মধ্যে নিজ খরচে মেরামত করে দেওয়ার কথা থাকলেও কোম্পানির লোকজন সেটা করছেনা। উচ্চমূল্যে পার্টস এনে মেরামত করছেন কৃষক। কম্বাইন হার্ভেস্টর বিতরণে অনিয়ম, টাকা নিয়েও যন্ত্র না দেওয়া, এক যন্ত্র একাধিকজনকে দিয়ে সরকার কর্তৃক ভর্তুকির বরাদ্দ তুলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কৃষকের কাছ থেকে ৩০ ভাগ ও সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকির ৭০ ভাগ অর্থ নিয়েও অনেক যন্ত্র গায়েব করে ফেলা হয়েছে এমন অভিযোগও আছে।”
এই যদি হয় অবস্থা, তবে সম্পাদকীয়তে কী বলা যায়? বললে বলতেই হয়, হাওরে কৃষকদেরকে কম্বাইন হার্ভেস্টর বিতরণ কর্মসূচিটা আপাদমস্তক একটি অনিয়ম-দুর্নীতির প্রকরণ। বিতরণের সঙ্গে উপর থেকে নিচ মহল পর্যন্ত সকল স্তরপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রশাসনের বাইরের সুবিধাসন্ধানী দুর্নীতিবাজরা এই দুর্নীতির সঙ্গে ওতপ্রোত। এই কম্বাইন হারভেস্টর বিকল ও গায়েব হওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে যে, কানার মনে মনে জানার মতো সকলেই জানেন, এই দেশে দুর্নীতিবাজরা রাষ্ট্রের ভেতরে আর এক অদৃশ্য রাষ্ট্র তৈরি করে রেখেছে, সে-অদৃশ্য রাষ্ট্র দৃশ্যমান রাষ্ট্রকে আড়াল থেকে পরিচালনা করে। এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে না পারলে এইরূপ দুর্নীতির উৎখাত করা যাবে না কখনওই। তারপর সম্পাদকীয়তে তেমন কীছু না বলে, নিজের গা বাঁচিয়ে, কেবল যথাযথ কর্তৃপক্ষের বরাবরে প্রতিকার প্রার্থনা করার অবকাশটুকু অবশিষ্ট থাকে। আমরা সে পথই অবলম্বন করছি এবং যথারীতি বরাবরের মতো কম্বাইন হাভেস্টর বিকল ও গায়েব হওয়ার প্রতিকারার্থে দায়ীদের বিচারপূর্বক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।