সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
ঢাকায় সিরিজ বৈঠক করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের মাধ্যমে দিন শুরু করে একে একে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এসব বৈঠকে দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশিদের জন্য আগামী দুই মাসের মধ্যে ভারতীয় ভিসা আরও দ্রুততার সঙ্গে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। পাশাপাশি ভারতের পক্ষ থেকে তিস্তা প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে, আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। দিনভর বৈঠক শেষে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা ত্যাগ করেন বিনয় কোয়াত্রা। বাংলাদেশে নতুন সরকার গঠনের পর এটাই ছিল ভারতের পক্ষ থেকে উচ্চপর্যায়ের প্রথম সফর।
বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসা বিনয় কোয়াত্রা বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরে পররাষ্ট্র দফতরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পরাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।
বৈঠক শেষে মাসুদ বিন মোমেন জানান, মাস দুইয়ের মধ্যেই ভারতীয় ভিসার প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে। ভিসা ইস্যুটা আগে থেকে অনেক সহজ হয়ে এসেছে। এরপরও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। বিশেষ করে যারা চিকিৎসার জন্য যান, তারা সময়মতো ভিসা পাচ্ছেন না এমন অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, হাইকমিশনে আরও লোকবল বৃদ্ধি করা হবে। ভারত থেকে আরও লোক পাঠাবে। দু-এক মাসের মধ্যে আরও দ্রুত ভিসা পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ব্রিকসের যোগদানের ব্যাপারে সব রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। ভারতের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে। তারা সবার সঙ্গে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানেও ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে রাখাইন স্টেটে যে সমস্যা হচ্ছে তা নিয়ে কথা বলেছি। বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) প্রবেশের বিষয়ে আলাপ করেছি। তাদের সীমান্তেও একই সমস্যা। এসব নিয়ে ভবিষ্যতে আরও কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সীমান্ত হত্যা নিয়ে সচিব বলেন, সীমান্ত হত্যার বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ভারী বা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার বন্ধে আবারও তাদের আহ্বান জানিয়েছি। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিষয়াবলি নিয়ে আন্তরিক আলোচনা হয়েছে। কানেকটিভিটি নিয়ে এবং বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসা সহজ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কারণ অনেক সময় ভিসা পেতে অপেক্ষা করতে হয়। ফিজিক্যাল কানেকটিভিটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে, নেপাল ও ভুটানকে ট্রানজিট দেওয়া এবং এ দুই দেশ থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। এরই মধ্যে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করার ক্ষেত্রে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে। ট্যারিফ নিয়েও আলোচনা অনেকটা চূড়ান্ত হয়েছে। এতে ভারতের ওপর দিয়ে বাংলাদেশ নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারবে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন, তারা তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে ‘নন-লেথাল’ (প্রাণঘাতী নয়) এমন অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছেন। তাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। এটি নিয়ে দুই দেশের সরকারি ও রাজনৈতিক পর্যায়ে আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিস্তায় বাংলাদেশের নেওয়া বড় প্রকল্পে ভারত সেখানে অর্থায়ন করতে চায়।