সংবাদের শিরোনামটি ‘রক্ষকই মানলেন না আইন!’ সংবাদ বিবরণীর ভেতরে লেখা হয়েছে, “গ্রামবাসীর আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গেল প্রায় তিনযুগে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গ্রামবাসীর যতেœ কিছু ছায়াবৃক্ষ বড় হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই বৃক্ষের ছায়ায় পাঠ নিচ্ছে বহুদিন ধরে। সম্প্রতি. বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, পরিচালনা কমিটির দুই সদস্যের সহায়তায় কর্তৃপক্ষ বা গ্রামের সঙ্গে কথা না বলেই এই বৃক্ষ কেটে বিক্রয় করেছেন। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা বলে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।” বৃক্ষনিধনের এমন ঘটনা কোথায় এবং কবে হয়েছে সেটা কোনও বড় কথা নয়, এই সম্পাদকীয় লেখার জন্য জরুরি কেবল বৃক্ষনিধন সম্পন্ন হয়েছে এই সংবাদটুকু।
আমরা একদা নিকট-অতীতে আমাদের চারপাশের ঘন বন নিধন করেছি এখন নিজের বাড়িঘরের আশপাশ ছেড়ে বিদ্যালয় ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিমালিকানার বাইরে অনধিকার প্রবেশ করেও বৃক্ষনিধনে নিমগ্ন হয়েছি। আমাদের সামাজিক অধঃপতন এতোটাই বেশি হয়েছে যে, বর্তমান বাংলাদেশে এমন হতেই পারে। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গ্রামবাসীর যতেœ বড় হওয়া ছায়াবৃক্ষ প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির কোনও কোনও সদস্য কটি টাকার লোভে কেটে বিক্রি করতেই পারেন এবং এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক, যেখানে এইসব ব্যক্তিবিশেষের কাছে সর্ববিধ নিয়ম-নীতি-আইন অথবা নামান্তরে নৈতিকতা নির্জীবতায় পর্যবসিত হয়ে পড়েছে। মানুষের ব্যক্তিস্বার্থ যেখানে সামাজিক স্বার্থকে অতিক্রম করে যায় সেখানে বৃহত্তর সামাজিক স্বার্থ তথা মানবিকতার কানাকড়িও মূল্য থাকে না। এমতাবস্থায় মানুষ বিমানবিকতাগ্রস্ত হয়ে প্রকৃতিবিনাশে নিমগ্ন হয়ে নিজের মানবিক অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে তোলো। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ কেবল নয় প্রকৃতিবিনাশের অনিবার্য পরিণতি প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনাশের প্রতিক্রিয়া তীব্র হয়ে উঠে সমগ্র পৃথিবীকে বিপন্ন করে তোলেছে। ঝড়, বন্যা, খরতাপ, তাপদাহ, দাবদাহ, বরফ গলন, সমুদ্রপৃষ্ঠেরর উচ্চতা বৃদ্ধি ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয় তীব্রতর হতে হতে অব্যাহত আছে।
অভিযোগ উঠেছে, “দেশব্যাপী খরতাপ, পরিবেশের রুক্ষতা নিয়ে হৈচৈ-এর মধ্যেই জেলার ছাতকের পল্লীতে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই ১৩ ছায়াবৃক্ষের প্রাণসংহার হলো। খোদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জ্ঞাত সাপেক্ষে এমন অপকর্ম ঘটেছে।” পল্লীর প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে উপজেলা পর্যন্ত সর্বাস্তৃত মানুষের এই অধঃপতনের সারার্থ পুঞ্জিত হয়েছে ‘রক্ষকই মানলেন না আইন!’ শিরোনামে।
বৃক্ষনিধন আর মানব সভ্যতাকে হত্যা করা সমান কর্ম। মানুষকে নিজের প্রজাতি রক্ষায় অবশ্যই বৃক্ষনিধন বর্জন করে বৃক্ষলালনসেবায় নিয়োজিত হতে হবে, তবেই সম্পন্ন হবে নিজ প্রজাতির সেবা। এই উপলব্ধিতে উজ্জীবিত হয়ে আমরা আইনের প্রয়োগই চাইতে পারি, জনগণের সচেতনতাকে মারমুখি হতে উসকে দিতে পারি না, কেবল বলতে পারি অপরাধীদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে তাদেরকে শাস্তিস্বরূপ বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষলালনের কাজে নিয়োজিত করা হোক।