1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

পাকিস্তানের বোধোদয় এবং বিএনপির ‘গোস্বা’! : বিপ্লব কুমার পাল

  • আপডেট সময় শনিবার, ৪ মে, ২০২৪

সারা দেশ যখন তীব্র গরমে অস্থির তখন রাজনীতির ময়দানে ‘পাকিস্তানের বোধোদয়’ নিয়ে দুটি দলের নেতাদের মধ্যে বাদানুবাদ চলছে। যার শুরুটা হয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে এক মন্তব্যকে ঘিরে। বাংলাদেশের বিকাশমান অর্থনীতি প্রসঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ তৎকালীন ‘পূর্ব পাকিস্তানের’ কথা স্মরণ করে বলেন, সে সময় ‘পূর্ব পাকিস্তানকে’ দেশের বোঝা মনে করা হতো। কিন্তু তারা শিল্পায়নের প্রবৃদ্ধিতে বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জন করেছে। আমি তখন খুবই ছোট ছিলাম যখন, বলা হতো যে এটা আমাদের কাঁধে একটি বোঝা। আজ আপনারা সবাই জানেন, সেই ‘বোঝা কোথায় পৌঁছেছে (অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে)। এখন আমরা যখন তাদের দিকে তাকাই, তখন আমরা লজ্জা বোধ করি।’
পাকিস্তানের জনপ্রিয় গণমাধ্যম ‘ডন’-এ প্রকাশিত এই খবর সারা দেশে আলোচনা হয়। প্রতিক্রিয়া জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নতি দেখে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ লজ্জিত হন। পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল উন্নয়ন দেখতে পায় না। বিএনপি যতটা অপপ্রচার করে, তাদের শাহবাজ শরিফের বক্তব্য থেকে প্রকৃত সত্য শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু আছে।
ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যে জ্বলে-পোড়ে ওঠে বিএনপি। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ওবায়দুল কাদের মুখে মুখে পাকিস্তানের বিরোধিতা করেন। কয়েক দিন আগে তাদের উন্নয়ন নিয়ে পাকিস্তান কথা বলায় কাদের সাহেব বলেছেন, পাকিস্তান তাদের উন্নয়ন দেখলেও বিএনপি দেখে না। এখন তারা পাকিস্তানের প্রশংসায় গদগদ।
পাকিস্তান বড় দেশ, স¤পদও বেশি। সে হিসেবে পাকিস্তানের জিডিপি অনেক বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মাথাপিছু জিডিপিতে পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি যেখানে প্রায় ২৬২১ ডলার, পাকিস্তানের তা মাত্র ১৪৭১ ডলার (২০২৩)। সামষ্টিক হিসেবে বাংলাদেশের জিডিপি যেখানে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানে তা সাড়ে তিনশ’ বিলিয়ন ডলারে পড়ে আছে।
রফতানি আয়েও পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেকর্ড পরিমাণ ৫ হাজার ৫৫৬ (৫৫.৫৬ বিলিয়ন) কোটি ডলারের পণ্য ও সেবা রফতানি করেছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান গত অর্থবছরে ৩ হাজার ২৫০ (৩২.৫০ বিলিয়ন) কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের রফতানি আয় এখন ৬০ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, মার্চ মাসের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ২৭ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশের রিজার্ভ আছে পাকিস্তানের প্রায় চারগুণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, রিজার্ভের পরিমাণ ২ হাজার কোটি বা ২০ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৫৪৫ কোটি বা ৫.৪৫ বিলিয়ন ডলারে।
শুধু অর্থনীতি নয়, সামাজিক সূচকেও বাংলাদেশ ভালো করছে। পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষ বেশি দিন বাঁচেন। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুষ্কাল ৭২ দশমিক ৪ বছর। আর পাকিস্তানে এই গড় আয়ু প্রায় ৬৯ বছর। অন্যদিকে মৌলিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এখন সাক্ষরতার হার ৭৭ শতাংশ। অন্যদিকে পাকিস্তানে এই হার ৫৯ শতাংশ। এ ছাড়া মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, প্রজনন হার – এসব খাতেও বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে।
গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের উন্নয়ন পাকিস্তানসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে রোল মডেল। কারণ নিকট অতীতে এত বিপুল জনসংখ্যার আর কোনও দেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়নি। বাংলাদেশের সঙ্গে যে চারটি দেশ বিশ্বব্যাংকের মধ্যম আয়ের তালিকায় নতুন করে ঢুকতে পেরেছে সেগুলো হলো- বাংলাদেশ, কেনিয়া, মিয়ানমার ও তাজিকিস্তান। এসব দেশের জনসংখ্যা অনেক কম এবং আয়তন অনেক বেশি। সম্প্রতি আরও দুটি দেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে, জাম্বিয়া ও গিনি। এর মধ্যে জাম্বিয়ার জনসংখ্যা ২ কোটি, গিনির জনসংখ্যা ১ কোটি। আয়তনের দিক থেকে গিনি বাংলাদেশের প্রায় দ্বিগুণ এবং জাম্বিয়া প্রায় ৫ গুণ।
সম্পদের সীমাবদ্ধতা ও বিপুল জনসংখ্যা সত্ত্বেও একমাত্র বাংলাদেশ বিস্ময়কর উন্নতি করে যাচ্ছে। যাকে জাতিসংঘ মহাসচিব বিশ্বের রোল মডেল বলেছেন। আইএমএফের ভাষায়, “একটি জনবহুল ও নি¤œ আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেভাবে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দারিদ্র্য দূর এবং বৈষম্য কমানোকে সংযুক্ত করেছে, তা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন উদাহরণ দেওয়ার মতো একটি দেশ”।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সারা বিশ্ব প্রশংসা করলেও দেশের সরকারবিরোধীদের তা চোখে পড়ে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রশংসার নয়, এখন দোষারোপের সংস্কৃতি একটি বড় জায়গা দখল করে আছে। কেউ নিজের দায় স্বীকার করতে চায় না। সব সময়ই চলে ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’ নীতির প্রয়োগ। শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করা।
রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করবে এটা যেমন ঠিক, তেমনি ভালো কাজের প্রশংসা করাও তাদের দায়িত্ব। একইভাবে সরকারি দলেরও এমন মনোভাব দেখানো উচিত। সরকারের ভুলগুলো যখন বিরোধীদল দেখিয়ে দেবে, সেটির প্রশংসা করা সরকারি দলের কর্তব্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের এমন চিত্র খুব একটা দেখা যায় না। বিএনপি নেতা রিজভীর প্রতিক্রিয়া দেখেও তেমনটি মনে হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কথায় বেশ গোস্বা হয়েছেন তিনি। দীর্ঘ বছর ধরে সরকারের উন্নয়নের বিরোধিতা করে আসছে বিএনপি। সেই আগুনে যেন পানি ঢেলে দিয়েছেন শাহবাজ শরিফ। পাকিস্তানের সঙ্গে বরাবরই বিএনপির ভালো স¤পর্ক। তাই শাহবাজ শরিফের কণ্ঠে বর্তমান সরকারের প্রশংসা হজম করতে পারছেন না বিএনপি নেতারা।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com