সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর (বিজেএস, ডাক্তার, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩৭ বছর), পুলিশের এসআই ও সার্জেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০ বছর পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদানসহ অন্যান্য দাবি মেনে না নিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সমাগম করবে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদ।
শুক্রবার (৩ মে) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আগামী ১১ মে সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই শিক্ষার্থী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তারা।
লিখিত বক্তব্যে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদের মুখপাত্র মো. শরিফুল হাসান শুভ বলেন, আমরা চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি চাই অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী ৩৫ চাই। তারই ধারাবাহিকতায় ৩০ আগস্ট থেকে লাগাতার কর্মসূচির অংশ হিসেবে দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শিক্ষামন্ত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর ডিও লেটার প্রদান করেন। তাছাড়া জাতীয় পার্টির মহাসচিব অ্যাডভোকেট মো. মুজিবুল হক চন্নু এমপি জোর সুপারিশ করেছেন, দাবী বাস্তবায়নে ৩৫ জন স্থানীয় সংসদ সদস্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নীতিগত সমর্থন এবং দাবি বাস্তবায়নে ৫ জন পেশাজীবী সংগঠন ও ৩ জন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ লিখিত সুপারিশের ভিত্তিতে দ্রুত প্রজ্ঞাপন চেয়ে জোর সুপারিশ করেন।
দাবিটি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারভুক্ত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবির বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের পাতা নং ৩৩ এর শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অনুচ্ছেদে ‘সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু তা এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি।
মানুষের গড় আয়ু বাড়লেও আবেদনের বয়সসীমা একই রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সকল পর্যায়ে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আজ থেকে ৩৩ বছর আগে ১৯৯১ সালে ২৭ বছর থেকে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়, যখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছর বিধায় চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা যৌক্তিক। গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে ২০১১ সালে অবসরের বয়স বৃদ্ধি করে ৫৭-৫৯ বছর করা হয়। ফলে কোনো শূন্যপদ সৃষ্টি হলো না। অথচ সেই সময়েই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা কি যৌক্তিক ছিল না?
কোভিড-১৯ এর ব্যাকডেট ২৬ মাস অকার্যকর ছিলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে প্রায় আড়াই বছর যাবৎ তেমন কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি বা নিয়োগ পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়নি। উপরন্তু, লকডাউন উঠিয়ে নেওয়ার পর থেকে প্রতি সপ্তাহান্তে ১০-১৫ টি বা ততোধিক পরীক্ষা একই দিনে, একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে যায় ফলস্বরূপ পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে অজ¯্র চাকরি প্রত্যাশী। কোভিড-১৯ এর শুরুতে যাদের বয়স ২৭-২৯ বছর ছিল তাদের বয়স এখন ৩০ বা ততোধিক। ফলে চাকরি প্রার্থীগণ বাস্তবিক অর্থে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ৩০ বছরের পরিবর্তে সাড়ে সাতাশ বছর পেয়েছে। উক্ত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার ৩৯ মাসের ব্যাকডেট ধরে একটি বয়স ছাড় প্রদান করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ব্যাকডেট কার্যকর ছিল ১৩ মাস, বাকি ২৬ মাস তা অকার্যকর অবস্থায় ছিল।
চাকরির বয়সসীমা বাড়লে নারীদের প্রতিবন্ধকতা দূর হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাল্য বিবাহের প্রবণতা বেশি যার কারণে উচ্চশিক্ষিত মেয়েরা চাকরি পেয়ে বিয়ে করতে চায়। স্বাভাবিকভাবে ৩০ বছরের পর মায়েদের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পেয়ে অর্ধেকে নেমে আসে। সন্তান নেয়ার জন্য নারীদের ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত বয়স হলো ২৩-৩০ বছর। সেখানে, চাকরির বয়স ৩৫ বছর করা হলে মেয়েরা উপযুক্ত সময়ে বিয়ে করে সন্তানকে লালন পালন করে চাকরির বাজারেও নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবে। তাদের ভিতরে বয়স ও ভীতি এই প্রতিবন্ধকতা দূর হবে।
এ সময় তারা সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এর অধীন দপ্তর/অধিদপ্তর/পরিদপ্তর এবং সংবিধিবদ্ধ/স্বশাসিত/ জাতীয়কৃত প্রতিষ্ঠানসমূহে বিভিন্ন পর্যায়ের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদ- অনুয়ায়ী সর্বনি¤œ ৩৫ বছর (বিজেএস, ডাক্তার, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩৭ বছর), পুলিশের এসআই ও সার্জেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০ বছর এবং সরকারি নীতি অনুযায়ী গবেষণা ও বিবিধ বিশেষ দক্ষতামূলক ক্ষেত্রে উক্ত বয়সসীমা উন্মুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেন।