সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
মানুষের খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করে কৃষক। কিন্তু সেই কৃষকের খানা বা পরিবারে নেই তিন বেলা খাবারের নিরাপত্তা। সরকারি জরিপ বলছে, দেশের ২৬ দশমিক ১৩ শতাংশ কৃষি পরিবার তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। এ জন্য কৃষিকাজ ছেড়ে ভিন্ন পেশায় ঝুঁকছেন তারা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত খাদ্য নিরাপত্তা পরিসংখ্যান-২০২৩ শীর্ষক জরিপে এ তথ্য উঠে আসে। সম্প্রতি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। খানা বলতে একই পাত্রে রান্না করে খায় এমন সদস্যদের বোঝায়।
জরিপে তীব্র পর্যায়ের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বলতে খাদ্য গ্রহণ কমানোর উচ্চ সম্ভাবনাকে বোঝানো হয়েছে এবং এর ফলে ক্ষুধাসহ পুষ্টিহীনতার মতো গুরুতর অবস্থায় রূপ নিতে পারে। শুধু কৃষক নয়, তীব্র খাদ্য সংকটে রয়েছে সেবা খাতের ২০ দশমিক ৩২ শতাংশ খানা। শিল্প খাতের খানার মধ্যে ১৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, অন্যান্য কাজে নিয়োজিত খানার ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
তুলনামূলকভাবে ভালো রয়েছে যেসব পরিবারের কোনো সদস্য বিদেশে থাকে তারা। প্রবাসী আয়ের ওপর চলা এসব পরিবারে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে ১৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। বিবিএসের ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ-২০২৩-এর চতুর্থ প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালে দেশে কৃষিকাজ ছেড়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। বিপরীতে শিল্প খাতে ৩ লাখ এবং সেবা খাতে ৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে কৃষি খাতে নিয়োজিত রয়েছে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৫২ হাজার, সেবায় ২ কোটি ৭২ লাখ ২০ হাজার এবং শিল্প খাতে রয়েছে ১ কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার পরিবার। ২০২২ সালে কৃষিতে ছিল ৩ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার, সেবায় ২ কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার এবং শিল্পে ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ৭০ হাজার। তবে কৃষি খাতে কমলেও সার্বিকভাবে এখনও এ খাতে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা বেশি।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যান্ট প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ মনে করেন, কৃষিতে নিরাপত্তা কম থাকায়ও অনেকে পেশা পরিবর্তন করছে।
বিবিএস সবশেষ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ‘কৃষি শুমারি-২০১৯’ জরিপ প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, ১১ বছরে আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে ৪ লাখ ১৬ হাজার একর। ২০০৮ সালে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৯০ লাখ ৯৭ হাজার একর জমি। ২০১৯ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৮১ হাজার একর।
জরিপে বিভাগভিত্তিক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে রংপুরের মানুষ। এ অঞ্চলের ২৯ দশমিক ৪১ শতাংশ পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। এরপরের অবস্থানই ময়মনসিংহের। এ বিভাগের ২৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ পরিবারের খাদ্যের নিরাপত্তা নেই, রাজশাহী বিভাগের ২৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ পরিবার, বরিশাল বিভাগের ২৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, খুলনা বিভাগের ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ, চট্টগ্রামের ১৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ, সিলেট বিভাগের ২৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। সবচেয়ে কম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে ঢাকা বিভাগের মানুষ। এ বিভাগে নিরাপত্তাহীন পরিবারের হার ১৭ দশমিক ২৪ শতাংশ।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. কাজী মো. রেজাউল করীম বলেন, এখন মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। আয় করার পরেও পণ্যের দাম বেশি থাকার কারণে অনেকেই প্রয়োজন অনুযায়ী কিনতে পারছেন না। এ জন্য খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে।