শংকর দত্ত ::
সামাজিক অবজ্ঞা ও অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছাতকের বেদেপল্লীর শিশুরা। একজন কোমলমতি শিশুর হাতে যখন বই-খাতা থাকার কথা, তখন বেদে শিশুর হাতে তুলে দেওয়া হয় সাপের বাক্স। তা নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হয় পরিবারের আহারের ব্যবস্থা করতে।
ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নে, গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের গোবিন্দনগর এলাকায় দেখা মিলে পলিথিন ও ছেঁড়া-ফাটা কাপড় দিয়ে তৈরি অস্থায়ী বেদেপল্লীর প্রায় ৫শত পরিবারের শিশুরাও এভাবেই বঞ্চিত রয়েছে শিক্ষার আলো থেকে।
গোবিন্দগঞ্জ বেদেপল্লীর বাসিন্দা মোহাম্মদ সালমান বলেন, সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা উপার্জন করতে গ্রামগঞ্জের পাড়া-মহল্লায় ঘুরে বেড়াই। সারাদিন শেষে ফিরতে ফিরতে প্রায়ই সন্ধ্যা। কোনো কোনো দিন আমাদের সাহায্যের জন্য আমাদের ছোট মেয়েটিকেও নিয়ে যাই। এখন থেকেই তাকে পেশাগত সব বিষয় জানতে হবে। নইলে বড় হয়ে কি করে খাবে?
তিনি আরও বলেন, আমাদের তো স্কুলের কথা চিন্তা করাই যায় না। সারা বছর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়াই। কোথাও স্থায়ীভাবে বসবাস করিনা। তাই স্কুলে ভর্তি হয়ে লাভ কি? তবুও আমার বড় ছেলেকে জগন্নাথপুরের একটি স্কুলে ভর্তি করেছিলাম, তবে সে স্কুলে যায় না। কাজে চলে যায়, তাই আর স্কুলে ভর্তি করিনা।
গোবিন্দগঞ্জ বেদেপল্লীর সর্দার বকুল মিয়া বলেন, কোনো অভিভাবক চায় না তার সন্তান অশিক্ষিত থাকুক। কিন্তু আমাদের যে আয় তাতে সন্তানদের খরচ চালানো কঠিন। আমাদের এখানে ২১টি পরিবারে মোট ১৫ জন শিশু রয়েছে। এদের প্রায় ৬জনের জনেরই বয়স ৭ বছর পেরিয়েছে। তারা কেউ স্কুলে যায় না। অক্ষরজ্ঞানও নেই তাদের। যাযাবর জীবনে একেক সময় একেক স্থানে অবস্থান নেওয়ায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নেই এদের।
ছাতক উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শফিউর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রী বেদেপল্লী, উপজাতিসহ দেশের সাধারণ মানুষজনের জন্য ভাতা, বিশেষ শিক্ষাবৃত্তিসহ বিভিন্নধরনের স্কিম চালু করেছেন। তবুও বেদেপল্লীর মানুষজন আসতে চায়না। শিশুদের স্কুলে ভর্তি করতে চায় না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মুস্তফা মুন্না জানান, শিক্ষাগ্রহণ একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল সহায়তার সুযোগ করে দিয়েছেন। বেদেপল্লীর শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।