জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া ::
তাহিরপুরের ট্যাকেরঘাট সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাইপথে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে কয়লা আনতে গিয়ে দুই বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও চারজন আহত হয়েছেন। এই ঘটনার এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতরা হলেন উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের লাকমা নয়াপাড়া (৩নং ওয়ার্ড) গ্রামের বাসিন্দা শাহাব উদ্দিনর ছেলে খায়রুল মিয়া (২৭) ও একই গ্রামের রমজান মিয়ার ছেলে মুকলেছ মিয়া (২৫)। নিহত দুই জন স¤পর্কে ভায়রা ভাই।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার (১৮ মার্চ) রাত ১১টার দিকে উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ট্যাকেরঘাট সীমান্তে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের ১১৯৮ আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ২ এস এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে তাহিরপুর থানা পুলিশ। এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন।
স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, কলাগাঁও, চারাগাঁও, জঙ্গলবাড়ি, লালঘাট, বুরুঙ্গাছড়া এলাকা দিয়ে রাতের আঁধারে চিহ্নিত চোরাচালান চক্রের সদস্যরা চোরাই পথে অবৈধভাবে ভারত থেকে শত শত টন কয়লা বস্তায় ভরে স্থানীয় যুবকদের দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় চোরাচালানিরা লাকমা গ্রামের ১০-১৫ জন যুবককে রাত ১০টার দিকে ট্যাকেরঘাট স্কুল ও লাকমা বাজারের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১১৯৮ এর ২ এস এলাকা দিয়ে চোরাইপথে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধভাবে ভারতের কয়লা গুহা থেকে কয়লা আনতে পাঠায়। ভারতের ওই এলাকায় একাধিক গুহা থাকলেও খায়রুল মিয়া ও মুকলেছ মিয়ার যে গুহায় প্রবেশ করে সেখানে অক্সিজেন সংকট ছিল। গুহার ভেতর যাওয়ার পর তারা দুজন অক্সিজেন স্বল্পতার মধ্যে পড়ে। খবর পেয়ে সহযোগীরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে তাদের উদ্ধার করে গুহার বাইরে নিয়ে আসে। পরে দুজনকেই রাত ১২টায় তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে, ওই গুহা থেকে নিহত দুই যুবককে উদ্ধার করতে গিয়ে আরও চারজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সীমান্ত এলাকার সচেতন মহল দাবি করেন, চোরাকারবারিদের প্ররোচনায় একের পর এক যুবকের মৃত্যু হচ্ছে কয়লার গুহায়। যাদের প্ররোচনায় এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে সেই সব কয়লা চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে ও তাদের সহযোগিতাকারী এবং তাদের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। না হলে সীমান্ত এলাকায় এমন মৃত্যুর ঘটনা ঘটবেই।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, নিহতদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মঙ্গলবার সকালে সুনামগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই বিষয়ে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এই বিষয়ে ট্যাকেরঘাট বিজিবি ক্যা¤েপর কমান্ডার সাইদুর রহমান বলেন, সীমান্ত এলাকার কঠোর নজরদারির রয়েছে আর নিয়মিত টহল দিচ্ছি আমরা। শুনেছি ভারতের কয়লা গুহায় দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তবে তারা কিভাবে আর কখন ভারতে প্রবেশ করেছে তা আমাদের জানা নেই।
এই বিষয়ে জানতে সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবির অধিনায়ককের মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল উপজেলার বালিয়াঘাট সীমান্ত ফাঁড়ির লাকমা এলাকা দিয়ে ভারতীয় চোরাই কয়লার কোয়ারি থেকে চুরি করে কয়লা আনতে গিয়ে কোয়ারির মাটি চাপা পড়ে অনিক মিয়া (২০) নামের এক বাংলাদেশী যুবকের মৃত্যু হয়। একইভাবে ৪ অক্টোবর সকাল ৯টার দিকে ট্যাকেরঘাট সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতের শিবপুর বস্তি এলাকার কালা পাহাড়ের চোরাই কয়লার গুহার ভিতরে ঢুকে (কয়লা কোয়ারি) কয়লার বস্তা নিয়ে আসার সময় বড় পাথর চাপায় রুবেল মিয়া (২৮) নামে যুবকের মৃত্যু হয়। নিহত রুবেল মিয়া উপজেলা উত্তর বড়দল ইউনিয়ন রজনী লাইন গ্রামের কেনু মিয়ার ছেলে।
এছাড়াও গত বছরের ৭ নভেম্বর চাঁনপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে কয়লা আনতে গিয়ে তিন বাংলাদেশিকে আটকের পর বিএসএফ পতাকা বৈঠকের মাধ্যম হস্তান্তর করে। বৃহ¯পতিবার (১৪ মার্চ ২০২৪) ভোর রাতে ১১৯৯ আন্তর্জাতিক পিলার ভারতের মেঘালয়ের ৪ নাম্বার নামক এলাকায় চোরাই পথে অবৈধভাবে ভারতের কয়লা গুহা থেকে কয়লা আনতে গিয়ে পাথর চাপায় আইয়ুব আলী (২৪) নামে এক যুবক নিহত হন। তিনি উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের রজনী লাইন গ্রামের বাসিন্দা মজনু মিয়ার বড় ছেলে।