সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
জীবনে সফলতা বলতে অনেকে বোঝেন ‘বিসিএস ক্যাডার’ হওয়া। ফলে দেশে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার প্রতিযোগিতা বেড়েই চলছে। চাকরির বাজারেও বিসিএস ক্যাডারের বেশ চাহিদা। এসব কারণে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরই বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। বিসিএসের কারণে শিক্ষার্থীরা বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখায় কম গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে চলছে নানামুখী আলোচনা।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) এক বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলেছেন, বিসিএসমুখী পড়ালেখার কারণে শিক্ষার্থীরা মাত্র ৬টি বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়ালেখা করেন। এতে তারা বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখায় যথাযথ মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হন। ফলে উচ্চশিক্ষার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন হচ্ছে না। এ জন্য তারা বিসিএস পরীক্ষার ধরন পাল্টাতে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সঙ্গে ইউজিসিকে আলোচনা করতে পরামর্শ দিয়েছেন।
গত কয়েক বছর ধরে বিসিএসের পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষাবিদরা। মুখস্থ-নির্ভর তথ্য-উপাত্তে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন প্রার্থীরা। বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে ¯œাতক-¯œাতকোত্তর পাস করা লাখ লাখ শিক্ষার্থী চোখ বন্ধ করে, আমেরিকার প্রেসিডেন্টের নাম কিংবা হনুলুলু কোনো দ্বীপের রাজধানী তা মুখস্থ করছেন। যেন বিসিএস ক্যাডার হওয়া মানে জীবনের সব সফলতা হাতের মুঠোয় ধরা দেওয়া। শুধু বেতন নয়, ক্ষমতার দাপট মেলে ধরার অন্যতম মাধ্যম এই বিসিএস।
সবশেষ ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ৩ লাখ ৩৮ হাজার প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। এই বিসিএসে মোট পদ ৩ হাজার ১৪০টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেওয়া হবে স্বাস্থ্য ক্যাডারে। সহকারী সার্জন ১ হাজার ৬৮২ জন, সহকারী ডেন্টাল সার্জন ১৬ জন। এর পর সবচেয়ে বেশি নেওয়া হবে শিক্ষা ক্যাডারে। বিভিন্ন বিষয়ে এই ক্যাডার থেকে বিসিএস শিক্ষায় ৫২০ জন নেওয়া হবে। প্রশাসনে ২৭৪ জন, পররাষ্ট্রে ১০, পুলিশে ৮০, আনসারে ১৪, মৎস্যে ২৬ ও গণপূর্তে ৬৫ জন নেওয়া হবে।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দেশে যেমন শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসকের দরকার আছে, তেমনি বিসিএস ক্যাডারেরও দরকার আছে। প্রশাসনিক ক্যাডার দিয়েই দেশ চলবে কিনা রাষ্ট্র সেটি সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, শিক্ষাকে মর্যাদা দিতে হবে। অন্য পেশাজীবীদেরও সম্মান-মর্যাদা দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে সবাই সরকারি চাকরির পেছনে ছোটে না। আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া ছাত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চাইতেন। এখন বিসিএস ক্যাডার হতে চাইছেন। এর নিশ্চয় কারণ আছে। এই বিষয়গুলোতে রাষ্ট্রকে দৃষ্টি দিতে হবে।