সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
পুরোনো বদনাম ঘুচিয়ে প্রাক-প্রাথমিকে আবার নতুন উদ্যমে ফিরছে ব্যতিক্রমী স্কুল ফিডিং। প্রকল্পটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো কার্যক্রমটির ডিপিপি পর্যালোচনা চলছে পরিকল্পনা কমিশনে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, শিগগিরই এ কার্যক্রমটির প্রস্তাবনা অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উত্থাপন করা হবে।
প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ উপজেলা। তবে সারা দেশের ৫৯১টি বিদ্যমান উপজেলার মধ্যে কোন জেলার কোন উপজেলা বাছাই করা হবে তা চূড়ান্ত হয়নি। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা থেকে সর্বশেষ দারিদ্র্যপীড়িত জনবসতি এলাকা চিহ্নিত হওয়ার পর তা নির্বাচনে বসবে কর্তৃপক্ষ।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, পুরোনো প্রকল্পের মতো এবার ডাল ও খিচুড়ি থাকছে না স্কুল ফিডিং প্রস্তাবে। শিশুর মেধা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এমন খাবার পরিবেশন করা হবে। এর মধ্যে থাকতে পারে মৌসুমি ফল ও পুষ্টিকর খাবার।
প্রকল্পটির জন্য দুটি লক্ষ্য এবং চারটি উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যের মধ্যে শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরসন ও শিশুর পুষ্টি চাহিদাপূরণ এবং ধনী-গরিবের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনা। আর উদ্দেশ্য হচ্ছে অনুকূল পরিবেশে শিশুদের পাঠগ্রহণের ব্যবস্থা করা। স্কুল ফিডিংয়ের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে প্রাক-প্রাথমিকে শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করা, উপস্থিতির হার বৃদ্ধি করা, নিরাপদ খাদ্য পরিবেশনের মাধ্যমে শিশু পাঠদানে মনোনিবেশ করানো এবং স্কুল চলাকালীন বিদ্যালয়ে কোমলমতি শিশুদের ধরে রাখা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) দিলিপ কুমার বণিক বলেন, শিশুরা ক্ষুধা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ স্কুলে থাকলে তাদের পাঠ মনোযোগে বিঘœ ঘটতে পারে। এজন্য মহৎ উদ্দেশ্য এই স্কুল ফিডিং কার্যক্রমটি ফের চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু একটা উদ্দেশ্য নয়, এর অর্থনৈতিক ইতিবাচক দিকগুলো বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে এই কার্যক্রম ঘিরে মৌসুমি ফলফলাদির উৎপাদন বাড়বে। মানুষের কর্মসংস্থান হবে। দেশ অর্থনীতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হবে। আগের বারের ‘মিড ডে মিল’ ডাল-খিচুড়ি নিয়ে নানা নেতিবাচক খবর প্রকাশের কারণে সরকারের নেওয়া উদ্দেশ্যটি ব্যর্থ হয়। তাই এবার নানামুখী চিন্তা করে শিশুর জন্য সুষম খাবারের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫০ উপজেলায় টার্গেট ধরে প্রকল্পটি নেওয়া হলেও দারিদ্র্যপীড়িত, দুর্গম ও অনগ্রসর এলাকা চিহ্নিত না হওয়ার কারণে এলাকা নির্ধারণ এই কার্যক্রমটি স্থগিত রাখা হয়েছে। সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহম্মাদ এক সভায় জানিয়েছিলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে যে দারিদ্র্যপীড়িত, দুর্গম ও অনগ্রসর এলাকা চিহ্নিত আছে সেটি অনেক পুরোনো। চলতি বছর নতুন করে জরিপের মাধ্যমে নির্ধারিত এলাকা চিহ্নিত হওয়ার পর কোন জেলার অধীনে উপজেলা বাছাই করা হবে তা চূড়ান্ত করা হবে।
সূত্র বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ঠিক আড়াই বছর আগে স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতায় প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মিড ডে মিল হিসেবে খিচুড়ি দেওয়ার প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ওই প্রকল্পে শিশুদের রান্না খাবারের ব্যবস্থাপনা দেখতে কর্মকর্তাদের বিদেশে পাঠানোর একটি অঙ্গ থাকায় সেটি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাতিল করা হয়। এবার সেই প্রকল্পটিই সংশোধন করে নতুনভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক মাছুম বিল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশের বিপুল পরিমাণ শিশু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে যেতে পারে না, পারলেও পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারে না খাবারের অভাবে। যে শিশু সকালে বাড়ি থেকে না খেয়ে আসে, বিদ্যালয়ের পড়ালেখায় স্বভাবতই সে মনোযোগী হতে পারে না। ফলে স্কুল ফিডিংয়ের পুষ্টিকর খাবার কর্মসূচি শিশুদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যে স্কুলে বিস্কুট খাওয়ানো হয়, সেসব স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার থাকে বেশি। খাবারের কারণে তাদের ক্ষুধা নিবৃত্তি হয় বলে তারা পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারে। পুষ্টিকর খাবার বা বিস্কুট শিশুর স্বাস্থ্যের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।