সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
কোনো ব্যক্তি তার সব স¤পত্তি বিক্রি করে ব্যাংকে কয়েক কোটি টাকা রাখলেন কিংবা লটারিতে এক কোটি টাকা জিতলেন, এতে কিন্তু ওই ব্যক্তিকে কোটিপতি বলা যাবে না। অর্থনীতির দৃষ্টিকোণে যদি টাকার প্রবাহ কোটি টাকা বা এর বেশি থাকে তখন তাকে কোটিপতি বলা যাবে।
ব্যাংকে কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তি নয়। এটি শুধুমাত্র ব্যাংক হিসাবে গচ্ছিত অর্থের হিসাব। কিন্তু এমন অনেক কোটিপতি রয়েছেন যাদের ব্যাংকে হয়তো জমানো অর্থ নেই কিন্তু দেশে ও দেশের বাইরে প্রচুর স্থাবর-অস্থাবর স¤পত্তি রয়েছে। যার পরিমাণ কোটি টাকারও বেশি। আবার ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়াও প্রতিষ্ঠান বা একাধিক ব্যক্তি থাকতে পারেন। আবার একজনের একাধিক কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব থাকতে পারে। সে হিসেবে দেশে এখন কোটিপতির প্রকৃত সংখ্যা কত, সে বিষয়ে ব্যাংকের এই প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট কোনো চিত্র পাওয়া যায় না। এ নিয়ে কোনো পরিসংখ্যানও নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষ প্রান্তিকে, অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর ৩ মাসে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ৩২২টি। এর বিপরীতে আমানত বেড়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।
তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা রয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টি। কোটি টাকার ওপরে এসব ব্যাংক হিসাবে জমা আছে ৭ লাখ ৪১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা।
গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বরে ১ কোটি টাকার বেশি আমানতের ব্যাংক হিসাব ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৬টি। ওই প্রান্তিকে এসব ব্যাংক হিসাবে জমা ছিল ৭ লাখ ২৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩ মাসের ব্যবধানে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ৩২২। একই সময়ে এসব হিসাবের বিপরীতে জমা টাকার পরিমাণ বেড়েছে ১৫ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। দেশের ব্যাংকিং খাতের আমানতের ৪৮ দশমিক ২৮ শতাংশই জমা করেছেন কোটি টাকার হিসাবধারীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯২ হাজার ৫১৬টি। যেখানে জমা ছিল ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। ৫ কোটি ১ টাকা থেকে ১০ কোটির ১২ হাজার ৬৫২টি হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৯ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা।
এ ছাড়া ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা রয়েছে ৪ হাজার ৮২টি, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে ২ হাজার ২টি, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে ১ হাজার ৩৪৫টি, ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৯১২টি আমানতকারীর হিসাব। আর ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫১২টি এবং ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৪৮০টি, ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ৭৩৮টি। তা ছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা ১ হাজার ৮১২টি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতিদের হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি। ২০২০ সালে ডিসেম্বর শেষে দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টিতে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বেড়ে কোটিপতি হিসাব দাঁড়ায় ১ লাখ ১৯৭৬টিতে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি।
দেশে প্রকৃত কোটিপতির সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। ফলে কত মানুষের কোটি টাকা রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান মেলে না। তবে ব্যাংকে কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা থেকে একটা ধারণা পাওয়া যায়। কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা করোনা মহামারীর পর থেকে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।