স্টাফ রিপোর্টার ::
শান্তিগঞ্জে ধামাইলগানের অমর স্রষ্টা হিসেবে খ্যাত প্রয়াত প্রতাপরঞ্জন তালুকদার স্মরণে দিনব্যাপী ধামাইল উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। উৎসবে নেত্রকোণা, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ২৩টি দল অংশ নিয়ে প্রতাপ তালুকদারের হারিয়ে যাওয়া জনপ্রিয় ধামাইলগান পরিবেশন করে। শান্তিগঞ্জ উপজেলা অডিটোরিয়াম ‘ঝিলমিল’ এ ধামাইল অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার সকাল থেকেই ধামাইল পরিবেশন শুরু হয়। বিকেলে আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। অনুষ্ঠানে লোকগানের শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, লেখক, গবেষকসহ সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও সুনামগঞ্জ ৩ আসনের সংসদ সদস্য এম এ মান্নান তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাউল, ধামাইল গান ও লোক সংস্কৃতি আমাদের শেকড়। একে ভুলে গেলে আমাদের শেকড়কে অস্বীকার করা হবে। লোকসংস্কৃতির জন্য সুনামগঞ্জ উর্বর ভূমি। সুনামগঞ্জে অনেক আধ্যাত্মিক কবি, মরমী কবি হাসন রাজা, বৈষ্ণবকবি রাধারমণ দত্ত, বাউল স¤্রাট শাহ আব্দুল করিম, দুর্বিণ শাহসহ অসংখ্য লোককবি জন্মগ্রহণ করেছেন। তাদের রচয়িত কবিতা ও গান আমাদের চারপাশে মানুষের মনে গেঁথে আছে। তাদেরকে অনুসরণের মাধ্যমে বাউলগান ও লোক সংস্কৃতিকে আরো সমৃদ্ধ করতে হবে।
প্রতাপ রঞ্জন স্মৃতি পরিষদ ও ধামাইল সংরক্ষণ পরিষদ সুনামগঞ্জের আয়োজনে ৩য় বারের মতো লোককবি প্রতাপ রঞ্জন ধামাইল উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতাপ রঞ্জন স্মৃতি পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত তালুকদার পুল্টনের সভাপতিত্বে ও প্রতাপ রঞ্জন স্মৃতি পরিষদের সাধারণ স¤পাদক শ্যামল দেব ও কেডি প্রদীপ দাসের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন লোকসংস্কৃতি গবেষক পার্থ তালুকদার, লোক গবেষক অরবেন্দু কুমার দাস, দৈনিক সুনামকণ্ঠ স¤পাদক বিজন সেন রায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা, সাদাত মান্নান অভি, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান দুলন রাণী তালুকদার, সুনামগঞ্জ পৌর কাউন্সিলর সামিনা চৌধুরী মনি, সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রওনক বখত, সুনামগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি লতিফুর রহমান রাজু।
এসময় অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত সুজন, শহীদুল ইসলাম ও শাহীনুর রহমান শাহীন, গীতিকবি প্রতাপ রঞ্জন তালুকদারের সহধর্মীণি সুচিত্রা রাণী রায়, প্রবীণ ধামাইল শিল্পী মিলন রাণী তালুকদার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও সুনামগঞ্জ ৩ আসনের সংসদ সদস্য এম এ মান্নান এমপি ধামাইল উৎসবে অংশগ্রহণকারী ২৩টি দলকে ক্রেস্ট প্রদান করেন।
উৎসবের আয়োজকরা জানান, হাওরাঞ্চলের ধামাইল গানের স¤্রাট বলা হয় প্রতাপ রঞ্জন তালুকদারকে। জীবদ্দশায় তিনি হাজারো গান রচনা করেছেন। যার বেশিরভগাই ধামাইল ও ধর্মীয় গান। এমনকি তিনি রাজনৈতিক ধামাইলও রচনা করেছেন। হাওরাঞ্চলের হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামগুলোর পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান আচারাদিতে বহুল পরিবেশিত হয় তার ধামাইল গান। কিন্তু জাতীয়ভাবে প্রচারণার অভাবে তিনি হারিয়ে যেতে বসেছেন। নতুন প্রজন্ম তার সম্পর্কে বেশি কিছু জানেনা। তাই তার জন্ম এলাকার সংস্কৃতিকর্মীরা তার নামে প্রতাপরঞ্জন স্মৃতি পরিষদ গঠন করে গত তিন বছর ধরে ধামাইল উৎসব করছেন। এবারের উৎসবে সিলেট বিভাগ ছাড়াও নেত্রকোণা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের ধামাইল দলও আসে।
নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুড়ি উপজেলার হায়াতপুরের লোকদল ধামাইল সংঘের সদস্য শিবানী তালুকদার বলেন, আমাদের অঞ্চলেও প্রতাপরঞ্জনের বান্ধা গান ও ধামাইল খুবই প্রচলিত। বিয়ে শাদি, অধিবাসসহ সামাজিক, ধর্মীয় আচারাদিতে সবচেয়ে বেশি তার গানই পরিবেশিত হয়। তিনি হাওরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে কতটা জনপ্রিয় এটা বুঝাবার নয়। কিন্তু এই মানুষটি সম্পর্কে মানুষ বেশি কিছু জানেনা। নীরবেই দারিদ্র্যতার মধ্যে থেকে মারা গেছেন। তার সৃষ্টিগুলো সংরক্ষণ করা দরকার। আমরা লোকদল ধামাইল সংঘের মাধ্যমে তার গানগুলো পরিবেশন করছি। তাকে জাতীয়ভাবে ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছি।
প্রতাপরঞ্জন স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দে বলেন, হাওরাঞ্চলে প্রতাপরঞ্জন একজন প্রভাবশালী লোকশিল্পী। তার গান এমন কোন পরিবার নাই যেখানে চর্চা হয়না। তিনি হাজারের অধিক গান রচনা করেছেন। সেই গানগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা তার গানগুলো সংরক্ষণের দাবি জানাই। তাঁকে বাঁচিয়ে রাখতেই আমরা গত তিন বছর ধরে তার নামে উৎসব করছি। এবারের উৎসবে ২৩টি দল তার লেখা ধামাইলগান পরিবেশন করেছে।