জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া ::
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর। হাওরবেষ্টিত এই এলাকার বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। তাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস এলেই কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কলাগাছ, চেয়ার টেবিল দিয়ে বা অন্য কোনভাবে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করেন ছাত্রছাত্রীরা। সেই অস্থায়ী শহীদ মিনারেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকগণ। শহীদ দিবস শেষ হলেই আর সেই শহীদ মিনারের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।
তাহিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে শতাধিক গড়ে উঠেছে কিন্ডারগার্টেন, স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ। এর মধ্যে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। এছাড়াও হাওরাঞ্চলে সঠিকভাবে প্রচার, প্রচারণা ও শহীদ মিনার না থাকায় শিশু, শিক্ষার্থী বুঝে উঠতে পারে না বিভিন্ন জাতীয় দিবস স¤পর্কে। ফলে পাঠ্যবইয়ে পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে তাদের। আর যে সব বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার আছে সেগুলো আবার সারা বছরই থাকে অযতœ আর অবহেলায়।
তবে হাওরাঞ্চলের বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২১শে ফেব্রুয়ারিতে বন্ধ থাকে। তাই শিক্ষার্থীরা অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের মত করেই সারাদিন বাড়ির কাজ ও খেলাধুলা করে সময় কাটায়।
জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলের ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর, বিশ্বম্ভরপুর, দিরাই, শাল্লা, তাহিরপুরসহ ১১টি উপজেলার বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তৈরি করা হয়নি শহীদ মিনার। আর যে কয়েকটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে সেগুলো সারা বছরেই অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে। কেবল একুশে ফেব্রুয়ারি আসলেই আগের দিন ঘষামাজা করে সৌন্দর্য বাড়ানো হয় ওইসব শহীদ মিনারের।
তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৩৪টি সরকারি প্রাথমিক, ২১টি মাধ্যমিক ও নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি কলেজ ও ৬টি মাদ্রাসা আছে। কোনো মাদ্রাসাতে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। এর মধ্যে ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। অবশিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আজো শহীদ মিনার গড়ে ওঠেনি। এর মধ্যে বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, জনতা, বীরেন্দ্রনগর, ট্যাকেরঘাট, বালিজুরী, আনোয়ারপুরসহ মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৫টি শহীদ মিনার থাকলেও সেগুলোও সারা বছর থাকে জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকে। শুধু বিশেষ দিনগুলোতে পরিষ্কার ও সাজানো হয়।
৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামরুল আহমেদ জানান, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকলে আমরা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারতাম। শহীদ মিনার না থাকা হতাশাজনক।
জয়নাল আবেদিন মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র রুবেল মিয়া জানান, আমাদের উপজেলা সদরে একটি স্মৃতিসৌধ আছে, সেখানে আমরা প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানাই। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপনের দাবি জানাই।
তাহিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শহীদ মিনার নেই সেইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য স্কুলের প্রধানদের বলা হয়েছে এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার নির্দেশনা দেয়া আছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বাঘা জানান, ২১শে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা সৈনিক বীরদের প্রতি সম্মান জানাতে শহীদ মিনার না থাকার উপজেলা সদরে ছোট পরিসরে তৈরি একটি স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে সম্মান জানানো বেমানান দেখায়।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভিন বলেন, ভাষা শহীদদের সম্মানে শহীদ মিনার স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে সবার সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ভাষা শহীদের কথা তুলে ধরতে ও সম্মান জানাতে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপন করা খুবই প্রয়োজন। এই বিষয়ে আমি দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলব এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।