1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০১:৩৩ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

প্রীতবাস দাশ কেন ছাত্রদেরকে লাঠিপেটা করলেন?

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

প্রাইভেট পড়তে অপারগ হওয়ায় ১৩জন শিক্ষার্থীকে বেধড়ক লাঠিপেটা করেছেন শাল্লা উপজেলার গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। পত্রিকায় এই পেটানোর কথা বলা হয়নি, কায়দা করে বলা হয়েছে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। কারণ গণমাধ্যম মনে করে যে, অভিযোগ শেষ পর্যন্ত সত্য নাও হতে পারে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক প্রীতবাস দাশ বলে দিয়েছেন, ‘আমি দরজায় বারি দিতে গিয়ে হয়তো কেউ আঘাত পেয়েছে। এর জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করেছি তাদের কাছে।’ অর্থাৎ তিনি দরোজায় আঘাত করতে গেলে সে-আঘাত ১৩জন শিক্ষার্থীর উপর গিয়ে প্রযুক্ত হয়েছে। সত্যি তো অমৃত সমান কথা। সত্যকে মিথ্যায় পর্যবসিতকরণের প্রক্রিয়ায় এভাবেই ‘অমৃত সমান কথা’ শুরু হয়। দরোজা শিক্ষকের কাছে অপরাধী হয়ে উঠে, সে-অপরাধে শাস্তি পায় ১৩জন ছাত্র। অজুহাতের বলিহারি আর দুঃখ প্রকাশেরও। ইতোমধ্যে তার প্রলম্বন লক্ষ্য করা গেছে যখন সামাজিক-রাজনীতিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিবর্গ বিষয়টিকে তাঁদের ‘দেখেও না দেখার ভান করার মতো’ নির্লিপ্ততার মুখোশ মুখে এঁটে বসে থাকতে পছন্দ করেন এবং প্রকারান্তরে শিক্ষাকে পণ্য করে তোলার কাঠামোগত সহিংসতার সমাজসাংস্থিতিক প্রকরণোর পরিসরে নিশ্চিন্তে বসবাস করেন। পত্রিকায় লেখা হয়েছে যে, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ফোন বন্ধ ছিল, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গেও কথা বলা সম্ভব হয়নি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তাকেও পাওয়া যায় নি এবং যথারীতি এঁরা এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন বলে প্রতিপন্ন হতে পারে এমন কোনও তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়েছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ আসেনি। সব চেয়ে বড় কথা; একজন অভিভাবক বলেছেন যে, ঘটনা ঘটার সময় ‘অন্য শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু দেখেছেন।’ অথচ তাঁরা প্রতিরোধ করতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা প্রতিরোধের প্রয়াস না পেয়ে বা প্রতিরোধ করতে না পেরে প্রকারান্তরে বলে দিয়েছেন ‘আমরা যা করতে পারি নি, একজন তা করতে পারছেন, সুতরাং তাকে তা করতে দেওয়াই উত্তম। তিনি তো আমরা যা করতে চাই তাই করছেন।’
আমাদের প্রশ্ন হলো, শাল্লা উপজেলার গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতিটি কী? বিদ্যালয়ে আসলে কী হচ্ছে? বিদগ্ধজনের কেউ কেউ মনে করছেন : সেখানে পড়াশোনা হচ্ছে না, বিদ্যাকে পণ্য করে বাণিজ্য করা হচ্ছে এবং সেই বাণিজ্যের ব্যাঘাত সৃষ্টিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষক ছাত্রদের প্রতি মারমুখী হয়ে লাঠিপেটা করতে বাধ্য হয়েছেন। এই ঘটনা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার বিদ্যমান হালহকিকতকেই প্রকাশ করছে, এটা বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। সমাজ-রাষ্ট্রকে সত্যিকার অর্থে উন্নত করতে হলে শিক্ষককে অবশ্যই প্রাইভেট পড়তে না যাওয়ার কারণে শিক্ষার্থীকে গণহারে লাঠিপেটা করার মানসিকতা থেকে রেহাই দিতে হবে। মনে রাখতে হবে শিক্ষাব্যবস্থাটিকে বদলে দেওয়ার সময় এস গেছে অনেক আগেই। বিদগ্ধমহলের কেউ কেউ মনে করেন, সমাজের উপর এবংবিধ লাঠিপেটা চলতেই থাকবে, যদি না সমাজসাংস্কৃতিক পরিসরটিকে লাঠিপেটা-মানসিকতার বিপরীতে বদলে দেওয়া যায়। অর্থাৎ দেশের মাটি থেকে সামাজিক সম্পদ আত্মসাতের সামগ্রিক আর্থনীতিক ব্যবস্থাপদ্ধতি যদি বদলে দেওয়া না যায় তবে, বর্তমানে শেখ হাসিনার বদৌলতে যেটুকু উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তার তলানিটুকু থেকেও সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হবেন।
ভুলে গেলে চলবে না, ইতোমধ্যে নাগরিকদের মধ্যে ধানবৈষম্য বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে এক পর্যায়ে হয়তো দেখা যাবে যে, শাল্লা উপজেলার গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্রীতবাস দাশের মতো ক্ষুব্ধ হয়ে বঞ্চিত সাধারণ মানুষেরা সমাজের অসাধারণ ধনীদেরকে পথেঘাটে মারতে শুরু করছে, কারণ প্রীতবাস যেমন ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা চাইছেন তেমনি গরিবরা ধনীদের কাছে খাদ্য কেনার টাকা চাইবে। না পেলে মারতে শুরু করবে। আমাদের কাছে এটা একটা জটিল প্রশ্ন। আসলেই কী এমন ঘটে যেতে পারে? আমরা এই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের এই সম্পাদকীয়র শিরোনাম দিলাম ‘প্রীতবাস দাশ কেন ছাত্রদেরকে লাঠিপেটা করলেন?’

 

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com