1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৮:২২ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ : দেড় মাস পেরোলেও কাজে গতি নেই

  • আপডেট সময় বুধবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৪

শামস শামীম ::
প্রায় দেড় মাস অতিবাহিত হলেও সুনামগঞ্জের ৩৮টি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ এখনো ১০ ভাগ সম্পন্ন হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ ১৫৯টি ক্লোজারও অরক্ষিত। বিলম্বে কাজ শুরু হওয়ায় বাঁধ টেকসই হবেনা এবং বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কেটে বাঁধে ফেলায় অনেক বাঁধ বন্যাঝুঁকিতে পড়ে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। উল্লেখ্য ২০১৭ সন থেকে সুনামগঞ্জের হাওরের ফসলরক্ষায় ঠিকাদারি প্রথা বাতিল করে হাওর এলাকার কৃষকদের অংশগ্রহণে পিআইসি’র (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) মাধ্যমে বাঁধের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। নীতিমালা অনুযায়ী গণশুনানী করে প্রকৃত কৃষকদের মাধ্যমে বাঁধের কাজ করার কথা থাকলেও পিআইসিতে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছেন কৃষকরা। সম্প্রতি এই অভিযোগে একাধিক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ বোরো মওসুম বছরে ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলার ৩৮টি ছোট বড়ো হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের প্রাক্কলন শেষ হয় গত বছরের নভেম্বর মাসে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্ভেয়াররা ৩৮টি হাওরের ৯০৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রাক্কলন তৈরি করেন। তাদের প্রাক্কলনের প্রেক্ষিতে ৫৯১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ চূড়ান্ত করে ৭৩৪টি পিআইসি গঠিত হয়। গত ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করার কথা থাকলেও হাওরের পানি নামছেনা এই অজুহাতে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়। কাজ শেষ করার কথা ২৮ ফেব্রুয়ারি। তাছাড়া জাতীয় নির্বাচনের জন্যও কাজ বিলম্ব হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। বাঁধের কাজের ধীরগতি নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষকরা।
পিআইসি নীতিমালা অনুযায়ী জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ও সদস্যসচিব পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী। উপজেলা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদস্যসচিব পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপজেলা সেকশন অফিসার। কৃষকরা জানান, উপজেলা থেকে হাওরের গ্রামগুলোতে গিয়ে গণশুনানী করে বাঁধ এলাকার জমির মালিক ও সুবিধাভোগী কৃষকদের নিয়ে পিআইসি গঠন করার কথা থাকলেও সেটা না করে গোপনে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলা থেকেই কমিটি অনুমোদনের নামে ঘুষ গ্রহণ করা হয়েছে বলে প্রতিবাদী কর্মসূচিতে ক্ষোভ জানিয়েছেন কৃষকরা। এছাড়াও ঘুষের কারণে অক্ষত বাঁধে প্রকল্প এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারের অর্থ অপচয়ের অভিযোগও উঠেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছর ৩৮টি হাওরের ৫৯১ কিলোমিটার বাঁধের কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে ১৫৯টি বড়ো ক্লোজার রয়েছে। যেগুলোর নিচে বিশাল ভাঙা। হাওরের নদ-নদীতে পানি বাড়লে এসব ক্লোজার ঝুঁকিতে পড়ে। তাই আগে কাজ শুরু না হলে এসব বাঁধ অরক্ষিত থাকে। কৃষকরা জানিয়েছেন, আগাম বন্যায় প্রথমে বাঁধের ক্লোজার (বড় ভাঙ্গা) আঘাত হানে। ক্লোজারের নিচে গহীন গর্ত থাকায় নদী খাল পানিতে ফুলে ওঠলে বাঁধ ধসে যায়। তাই এসব ক্লোজারে শুরুতেই বাঁধ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন কৃষকরা। ১৫৯টি ক্লোজারের মধ্যে এখনো অর্ধেকের বেশি কাজ শুরু হয়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন ১৫৬টি ক্লোজারে সম্প্রতি কাজ শুরু হয়েছে বলে গড় কাজের অগ্রগতি ৩০ ভাগ। কৃষক ও হাওর আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন এখনো ১০ ভাগের বেশি বাঁধের কাজ হয়নি। কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন বাঁধের গোড়া থেকেও মাটি কেটে বাঁধকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।
কৃষকবন্ধু খ্যাত দিরাই উপজেলার পেরুয়া গ্রামের অমর চাঁন দাস বলেন, হাওরের বাঁধে কাজ শুরু হয়নি। বিলম্বে কাজ শুরু হওয়ায় বৃষ্টি ও আগাম বন্যার ধকল সইতে পারবেনা বাঁধ। ফাটল বা ধসে ফসলহানির ঘটনা ঘটবে। তাছাড়া প্রতি বছরের মতো এবারও অক্ষত, অপ্রয়োজনীয় বহু প্রকল্প নিয়ে সরকারের অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি প্রকৃত কৃষকদের বঞ্চিত করে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের পিআইসি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার অনন্তপুরের হাওর আন্দোলনের নেতা শফিউর রহমান বলেন, আমরা গত শুক্রবার হাওরে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেছি। আমাদের হাওরে কাজ শুরু হয়নি। যারা পিআইসি পাওয়ার কথা তাদেরকে না দিয়ে বাইরের এলাকার কৃষকদের পিআইসি দেওয়া হয়েছে। মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা পিআইসি নেওয়ায় হাওর অরক্ষিত থাকবে। তাছাড়া কোন কোন স্থানে কাজ শুরু হলেও বাঁধের গোড়া থেকে মাটি তোলায় বাঁধ আরো ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
শাল্লা উপজেলার মৌরাপুর গ্রামের কৃষক শিশু দাস বলেন, আমাদের এলাকায় পিআইসি গঠনে দুর্নীতি, অনিয়ম হয়েছে ব্যাপক। জমি নাই এমন একাধিক মানুষকে পিআইসি দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে অল্প ক্ষতিগ্রস্ত প্রকল্পেও বিপুল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের বহু অর্থ অপচয় হবে। তাছাড়া বাঁধের কাজের গতি অনেক কম।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, প্রতি বছরই পাউবো ও প্রশাসনের একটি দুর্নীতিবাজ চক্র পিআইসি গঠনের নামে ঘুষ নিয়ে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের প্রকল্প দেয়। প্রকৃত কৃষক বঞ্চিত হয়। তারা অক্ষত, অল্প ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধেও সমান বরাদ্দ দিয়ে সরকারের বিশাল অর্থ অপচয় করছে। তিনি বলেন, আমরা কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখেছি এখনো ১০ ভাগের বেশি কাজ হয়নি। আমরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশও করেছি। দুর্নীতি ও অনিয়ম থামানোর দাবি জানিয়ে আসছি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মামুন হাওলাদার বলেন, পানি বিলম্বে নামার কারণে মাটির অভাবে বাঁধের কাজে বিলম্ব হয়েছে। তবে এখন সবগুলো প্রকল্পে কাজ শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ ক্লোজারের কাজও শুরু হয়েছে। আশা করি যথাসময়ে এবার কাজ শেষ হবে। কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ পর্যন্ত ৩০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক ও বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, প্রতিটি উপজেলাতেই কাজ শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ আমরাও নিয়মিত মনিটরিং করছি। বাঁধের কাজ যাতে যথাযথভাবে ও যথাসময়ে সম্পন্ন হয় সেই দিকে নজরদারি রয়েছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, হাওরের শতভাগ ধান রোপণের কাজ শেষ হয়েছে। এবার হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। হাওরের আবাদকৃত ধানের পরিমাণ হবে প্রায় ১৩ লক্ষ ৭০ হাজার মে.টন। চাল হবে প্রায় ৯ লক্ষ ১৩ হাজার মে.টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকা।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com