স্টাফ রিপোর্টার ::
“হাওরের বাঁধ, কৃষি, নদী ও পরিবেশ সংকট নিরসনে করণীয়” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকালে জেলা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে এই সভার আয়োজন করে এলআরডি, বেলা এবং পানি অধিকার ফোরাম। সভায় হাওরের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সকলকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
বেলা’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যাড. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঞ্চালনায় ও এলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, এখানে বাঁধ এবং পিআইসি নিয়ে কথা হয়েছে। ৭৩১টি বাঁধ নির্মাণে ৫৯১ কিলোমিটারের কাজ করা হচ্ছে। যা ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করতে হবে। এছাড়া আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ এসেছে। সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হবে। মৎস্য আহরণের বিষয়ে যে কথা বলা হয়েছে, লিজ নিয়ে যারা জলাশয় শুকিয়ে মাছ নিধন করেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার মাধ্যমে জেল জরিমানা করা হবে এবং হচ্ছেও। এছাড়া হাওরের যে হিজল করচ গাছ কাটার যে কথা বলা হয়েছে সেটিও আমাদের কানে এসেছে। আমরা এই বিষয় নিয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, হাওর এবং হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রশাসন অত্যন্ত যতœশীল। যাদুকাটায় বালু উত্তোলন বন্ধের যে কথা বলা হচ্ছে, তবে এটির আইনগত কোন সুযোগ নেই। এটি আসলে পলিসি লেভেলের সিদ্ধান্ত। কয়েকদিন পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সচিব মহোদয় আসবেন। তখন বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হবে। আমরা চাই হাওরের উন্নয়নে কাজ করতে। হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ যারা নষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিব।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সৈয়দ মহিবুল ইসলাম, হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ স¤পাদক বিজন সেন রায়, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোস্তফা ইকবাল আজাদ, সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আল মাহমুদ, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী শমসের আলী প্রমুখ।
সভায় বেলা’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশ রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সুনামগঞ্জে টুরিজম চালু হলেও ইকোটুরিজম চালু হয়নি। একই সাথে হাওর বাঁধ অপরিকল্পিতভাবে করার ফলে হাওরের জীববৈচিত্র্যের উপর মারাত্মকভাবে প্রভাব পড়ছে। যার ফলে হারিয়ে যাচ্ছে হাওরের দেশি প্রজাতির মাছ। সেগুলো আমাদের কাছ থেকে চিরতরে হারিয়ে গেলে ফেরানো কি সম্ভব? চাষ করা মাছে তো আর হাওরের মাছের স্বাদ পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, এখানে বাঁধ নির্মাণ করা হয় কিন্তু কৃষকের সাথে পরামর্শ করা হয় না। পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের ইচ্ছে মতও কাজ করে। যতদিন পর্যন্ত ফসলরক্ষা বাঁধে প্রকৃত কৃষকদের সংযুক্ত করা হবে না ততদিন পর্যন্ত বাঁধ নিয়ম মাফিক হবে না। আর এ সব কারণে হাওরের দেশি মাছসহ জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দেশি প্রজাতির কয়েক রকম ধান হারিয়ে যাচ্ছে। সেগুলোর দিকে দ্রুত কৃষি বিভাগকে নজর দিতে হবে। রাতা, টেপিসহ হাওর অঞ্চলে উৎপাদিত কয়েক ধরনের ধান নাই বললেই চলে। এককথায় সবাই যদি হাওরের পরিবেশ রক্ষা করতে না পারি তাহলে বিপদ একার হবে না সবার জন্যই হবে। হাওরের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ধনী-গরীব বুঝে না।